সম্পাদকীয়
সাতাশে সেপ্টেম্বর স্তব্ধ হোক সারা ভারত
standstill on the 27th of September

সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার দুর্বার আহ্বান ২৭ সেপ্টেম্বর ভারত বনধ্! মোর্চা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, আন্দোলন ঘোষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর শেষ দেখে ছাড়বে। সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটিও একই লক্ষ্যে অবিচল। গত দশ মাস সমান তেজে অব্যাহত উত্তর পশ্চিম ভারতের কিষাণ জাগরণ, মোদী সরকারের সঙ্গে যার সম্মুখ সমরের কেন্দ্রভূমি এখন দিল্লীর সিংঘু সীমান্ত বরাবর। সরকারের তরফে সীমান্ত রেখা টেনে দেওয়ার অর্থ দেশবাসী কৃষক জনতাকে নিজভূমে পরবাসী করে রাখা। কেন্দ্রীয় সরকারের সামগ্রিক আচরণ ঔপনিবেশিক কায়েমী স্বার্থের মতোই। অসংখ্য কৃষক জনতার এই অবস্থান আন্দোলন প্রকৃত অর্থেই অভূতপূর্ব। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এর কোনও পূর্ব নজীর নেই। ইস্যু, দাবি, জেদ, তেজ ও গতিপ্রবাহে উত্তাল হচ্ছে বেশ কয়েকটি রাজ্য। সমগ্র পাঞ্জাব, হরিয়ানা তো বটেই, তার সাথে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখন্ড, রাজস্থানের এক বড় অংশে গড়ে উঠছে আন্দোলনের ভৌগলিক অখন্ডতা, তার প্রান্তরসব সম্প্রসারিত হয়ে চলছে প্রতিনিয়ত। এই লড়াই প্রত্যাশিত ফলাফল পেতে আন্দোলনের চারপাশে সমর্থন সংহতির ভারতজোড়া বলয়ও গড়ে ওঠার দাবি রাখে। আর তা সংগঠিত করার দায়িত্ব ভারতের সংগ্রামী শক্তি, সংগঠন সমূহ তথা শ্রেণী, সম্প্রদায়, জাত,ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, লিঙ্গ, অঞ্চল নির্বিশেষে সর্বস্তরের জনগণের।

অতিমারীর পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে অতিমারী আইনের ভয় দেখিয়ে বাধ্য করা হয়েছে গৃহবন্দী হয়ে থাকতে। কিন্তু কৃষককে আবদ্ধ করে রাখা যায়নি। কৃষক বাধ্য হয়েছে জীবন-জীবিকার হিসাব বুঝে নিতে আন্দোলনের পথে নামতে। কৃষক জনতা রাস্তায় নেমেছে চাষের উৎপাদন ব্যয়ের দেড়গুণ সহায়ক দাম নির্ধারণের দাবিতে, সরকারকেই সরাসরি ফসল কেনার প্রধান দায়বদ্ধতায় বাধ্য রাখতে, সরকারি সংগ্রহের মান্ডি আরও নিকটবর্তী করা এবং পরিমাণ আরও বাড়ানোর দাবিতে। মোদী সরকার এই ন্যায্য দাবিগুচ্ছ বানচাল করতে ন্যূনতম সংসদীয় আলোচনা এড়িয়ে স্রেফ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যতার জোরে জবরদস্তি চাপালো তিন আইনের মারপ্যাঁচ। যার উদ্দেশ্য হল, একদিকে উৎপাদন ব্যয়ের ও বিনিময় মূল্যের সংকট থেকে সুরক্ষার দেওয়ার সরকারের দায়দায়িত্ব অঘোষিত ভাবে প্রত্যাহার করে নেওয়া, অন্যদিকে কৃষি ও কৃষককে কর্পোরেটের গোলামী করতে বাধ্য করা। হুকুমের চুক্তি চাষ, দৈত্যাকার মান্ডি হাউস, সীমাহীন মজুতদারি, আর দামে মারার নির্দেশিত ব্যবস্থা চাপাতে মরীয়া মোদী সরকার। এই তথাকথিত আইনের শেকল পরাতে না দিতেই আজ কৃষক জনতা আন্দোলনের পথে নাছোড়বান্দা।

আসুন, কৃষি বাঁচাতে আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে আমরা কৃষকের পাশে দাঁড়াই। অন্নদাতা কৃষকের লড়াইয়ের সাথী হই। খাদ্যশস্যের সরকারি খাদ্যগুদাম স্বয়ংভর রাখতে, গণবন্টণ ব্যবস্থা বাঁচানোর স্বার্থে আমরা একজোট থাকি। এই লক্ষ্যে সাতাশে সেপ্টেম্বর সারা বাংলা সারা ভারত প্রতিবাদে প্রতিরোধে স্তব্ধ হোক!

খণ্ড-28
সংখ্যা-33