কোনো শূন্যস্থান ফাঁকা থাকে না। আমরা ভারতের জনগণ যদি বিন্দুমাত্র উদাসীন ও প্রকৃত ইতিহাসবিস্মৃত হই, তাহলে আদ্যপান্ত সমাজতান্ত্রিক চেতনার ভগৎ সিং ও তাঁর সহযোদ্ধা বটুকেশ্বর দত্তরা কবে যে আরএসএস-এর হাতে পড়ে “হিন্দু ভারত গঠনের কারিগর” মার্কা ডাহা মিথ্যে গালগল্প হিসেবে আমাদের ভাবী প্রজন্মের পাঠ্যবইয়ে চলে আসতে বাধ্য হবেন তা ধরা যাবে না। তাই সময় থাকতে অত্যন্ত সতর্ক হয়ে ওঠা জরুরি। স্বাধীনতার ৭৫ বছরে যখন বিজেপি সরকার “আজাদী কা অমৃত মহোৎসব” পালনের ছল করছে তখন তাদের পেটোয়া অভিনেত্রী বর্বরের মতো বলছেন, “ভারত ৪৭-এ নয়, ২০১৪-তে স্বাধীন হয়েছে”! কেবল দেশের সম্পদ নয়, প্রকৃত সত্য ইতিহাসটাও ওরা লুঠ করতে যাচ্ছে। যত বেশি ‘জাতীয়তাবাদে’র চিৎকার, তত বেশি জাতীয় সম্পদ বিক্রি! কি কিউট না? এই কর্পোরেট দালালি ও সাম্প্রদায়িক লুটেরা শাসনের ঘৃণ্য দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে ১৮ নভেম্বর বিপ্লবী যুব অ্যাসোসিয়েশন (আরওয়াইএ) ও অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশন (এআইএসএ)-এর ডাকে ও সিপিআই(এমএল) লিবারেশন পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির উদ্যোগে জেলার খণ্ডঘোষ থানার ওঁয়াড়ী গ্রামে ভগৎ সিং এর সহযোদ্ধা বটুকেশ্বর দত্তের (পুলিশ কর্তা স্যান্ডার্স হত্যা ও সংসদে বোমা নিক্ষেপে যিনি ভগৎ সিংয়ের সঙ্গী ছিলেন) জন্মভিটায় শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়া হয়। দিনটা বটুকেশ্বর দত্তের ১১১তম জন্মদিন।
ব্রিটিশের দেওয়া দ্বীপান্তরের সাজা শেষে যাঁকে স্বাধীন ভারতে সামাজিক বিস্মৃতির অতলে শেষ জীবন কাটাতে হয় পাটনায় বড় কষ্টকর অবস্থায়। বিপ্লবী কমিউনিস্টরা সময়ে সময়ে এই চরিত্রদের অন্বেষণ করে চলে। বর্ধমান শহরে রেলস্টেশন সংলগ্ন ভগৎ সিং মূর্তির পাদদেশে মাল্যদান ও শহীদ স্মরণের পরে এক বর্ণাঢ্য ট্যাবলো সহযোগে ছাত্র-যুবদের দীর্ঘ বাইক মিছিল ২১ কিলোমিটার পরিক্রমা করে পৌঁছায় ওঁয়াড়িতে। বটুকেশ্বর দত্তের মূল বসতবাড়িটি অনেক দেরীতে হলেও সরকারি সংস্কার সাম্প্রতিককালে কিছুটা হয়েছে। কিন্তু লাগোয়া প্রতিবেশি ঘোষ বাড়িটি (যে বাড়ির ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গে স্যান্ডার্স হত্যার পরে প্রায় ১৮ দিন আত্মগোপন করেছিলেন ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত, এবং এখানে থেকেই সংসদে বোমা হামলার পরিকল্পনা করেন তাঁরা। ১৮ দিনে তিনবার পুলিশ তল্লাশী চালায় দুটি বাড়িতে) এখনও অত্যন্ত ভগ্নদশায় রয়েছে নানাবিধ শরিকি টানাপোড়েনের জন্য। রাজ্য সরকারের উচিত অবিলম্বে এই জাতীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণে যাবতীয় সমস্যা নিরসনে আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হওয়া। গ্রামবাসীরাও অনেকে আয়োজক সংগঠনগুলির সঙ্গে বিপ্লবীদের স্মরণ কর্মসূচিতে অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন আরওয়াইএ-র রাজ্য নেতৃত্ব সজল দে, রণজয় সেনগুপ্ত, সমীর বসাক, আইসার রাজ্য সম্পাদক স্বর্ণেন্দু মিত্র, রাজ্য সভাপতি নিলাশিস বসু, সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির সুমি মজুমদার এবং সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পাল, পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক সলিল দত্ত, জেলা নেতা কুণাল বক্সী, আনসারুল আমন মণ্ডল ও অন্নদাপ্রসাদ ভট্টাচার্য সহ প্রায় একশোজন নেতা-কর্মী।
হালিসহর : হালিসহর সাংস্কৃতিক সংস্থা’র আয়োজনে হালিসহর সাংস্কৃতিক সংস্থা’র মহড়া ঘরে বিপ্লবী ভগৎ সিং’এর সাথী বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত’র ১১১তম জন্মদিবসে এক মনোজ্ঞ আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রারম্ভে মনোগ্রাহী গান পরিবেশন করে হালিসহর বিজ্ঞান পরিষদ’এর সাথীরা। বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত’এর প্রতিকৃতিতে ফুল ও মালা দেওয়া এবং নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সভা শুরু হয়। সভার সভাপতি রবি সেন মহাশয় আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত’র স্বপ্নের ভারতকে গড়ে তুলতে সকলকে আমাদের উৎসাহিত করতে হবে। মুখ্য আলোচক অশোক মুখোপাধ্যায় বিস্তারিত তথ্য সহযোগে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত’র জীবন, কর্মধারা, বিপ্লবী অনুশীলন, নির্বাসন ও পরবর্তী কর্মধারা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বিকৃত করার অপচেষ্টাকে আমাদের রুখতে হবে। প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রিয় গোপাল বিশ্বাস, ত্রিদীপ দস্তিদার, প্রদীপ ব্যানার্জী প্রমুখ বেশ কিছু সময়োপযোগী প্রশ্ন তুলে ধরেন। স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষের সংকল্প, ধারাবাহিকভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের ইতিবাচক চর্চা চালিয়ে যেতে সবাইকে আগ্রহী করে তুলতে হবে। সভাঘরের বাইরে বুকষ্টল থেকে বেশ কিছু উৎসাহী শ্রোতা বই কেনেন।
বজবজ : ভগৎ সিং’এর সহকর্মী স্বাধীনতা সংগ্রামী বটুকেশ্বর দত্ত’র ১১১তম জন্মদিবস উদযাপনের মাধ্যমে স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ উদযাপন শুরু হল বজবজে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন জেলা কার্যালয়ে। বটুকেশ্বর দত্তের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, পতাকা উত্তোলন ও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে কর্মসূচি সংগঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন পার্টির জেলা সম্পাদক কিশোর সরকার, লক্ষীকান্ত অধিকারী, সাবির রাজা, পঞ্চু ঘোষ, স্বপন নস্কর, মদন সর্দার সহ অন্যান্যরা।