রতন ছিলেন জীবনমুখী, বিষয়মুখী নয়
Ratan Biswas

প্রয়াত কমরেড রতন বিশ্বাসের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয় ৮ ডিসেম্বর ২০২২ পূর্ব বেলঘরিয়ায়, ১৫ ডিসেম্বর শহীদ মহল, দেশপ্রিয়নগরে ও ১৬ ডিসেম্বর কামারহাটি শ্রমিকাঞ্চলে। তিনটি স্মরণসভায় ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে বিভিন্ন মানুষের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যনীয়। বেলঘরিয়ায় সবাই ছিলেন পার্টি কর্মী, কামারহাটিতে চটকল শ্রমিক এবং দেশপ্রিয়নগর শহীদ মহল প্রাঙ্গনের স্মরণসভায় উপস্থিত বেশিরভাগ মানুষই ছিলেন পার্টির বাইরের। ছিলেন সমর্থক, বন্ধুবর্গ, প্রতিবেশী ও শুভানুধ্যায়ী মানুষজন। শহীদ মহলের সভায় রতনের বোন তাপসী লৌহ এসেছিলেন। প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কমরেড সরিৎ চক্রবর্তীর একক সংগীতের মধ্য দিয়ে সভার সূচনা হয়। পার্টির বেলঘরিয়া লোকাল কমিটির সম্পাদক অশোক সাহা শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন।

বক্তরা রতনের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। ৭০’র দশকে নকশালবাড়ি আন্দোলন অনেকের মতো রতনকেও প্রভাবিত করেছিল। বর্তমানে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এবং রাজ্য সরকারের দুর্নীতি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রতন একজন সামনের সারির কর্মী ছিলেন। তার মৃত্যুতে অঞ্চলে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। অনেকেই বলেন রতনের বন্ধুবাৎসল্যের টানেই এসেছেন। কেউ বলেন, রতন নির্দিষ্ট কেন্দ্রে (সিপিআই-এমএল লিবারেশননের মধ্যে থেকে) কাজ করেছেন, আর তারা সেই বৃত্তের মধ্যে থেকে একই কাজ করে চলেছেন। মহিলারা জানালেন, রতনের উদার হৃদয়, মরমী মন সমাজে মহিলাদের অবস্থানগত দুর্বলতা ও যন্ত্রণাগুলো বুঝতে পারতো। যেকোন ভুল বোঝাবুঝি শেষে তার অনাবিল সারল্যমাখা হাসি ভোলার নয়। এক পর্বতারোহী জানালেন, রতন পাহাড়ে যেতেন না কিন্তু ওদের যাত্রার সব খুঁটিনাটি খবর রাখতেন। উর্দুভাষী একজন বললেন রতনের আর একটা ঘর ছিল কামারহাটি। এই ধরনের মানুষের সহচার্য আমরা খুব কমই পাই। একজন বক্তা জানালেন, এলাকার পুকুর ভরাট, পুরকর বৃদ্ধির বিরুদ্ধে এবং দূষণ প্রতিরোধের আন্দোলনে রতনের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। সংখ্যালঘুদের পাশে থাকার বার্তা নিয়ে প্রতিদিন কামারহাটিতে যাওয়া নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। তিনি মানবাধিকার কর্মী ছিলেন। ধারাবাহিকভাবে জনগণের সেবার উজ্জ্বল উদাহরণ। সভার বক্তা হিসেবে সবসময় না থাকলেও, সভার প্রস্তুতি ও সভা শেষের নিতান্ত অকিঞ্চিৎকর কিন্ত অপরিহার্য কাজগুলো অবশ্যকৃত্য হিসেবে করে যাওয়া প্রকৃত অর্থে একজন কমিউনিস্ট অ্যাক্টিভিস্টের পরিচয়।

বিজ্ঞানের স্বার্থে রতনের মরণোত্তর দেহদানে বোন তাপসীর ভূমিকাও মহৎ।

নিপীড়িত মানুষের কষ্টে কাতর, সাহিত্য ও সংস্কৃতিপ্রেমী রতনের জীবনেও খুব স্বাভাবিক নিয়মেই প্রেম এসেছে, চলেও গেছে। কিন্তু চেতনার চলমানতা থামেনি। “কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়” — তার উত্তর খুঁজতে খুঁজতে, নিজের সম্পর্কে উদাসীন, পদাতিক রতনের হঠাৎ থেমে যাওয়া সকলের বুকে বড় বাজছে। রতন বিশ্বাস লাল সেলাম!

উপস্থিত বক্তারা ছিলেন ঝন্টু মজুমদার (সিপিআইএম), বরুণ চক্রবর্তী (সিপিআই), ডা. শুভজিৎ ভট্টাচার্য (জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের সংগঠক), মাজাহার খান, নাভাল মাহাতো, আশ মহমদ, বানারশী রাম, নুর আলম, রাজেশ সরোজ (বিসিএমএফ), অশোক রায়, ভুপেন সরকার, মৃণাল জানা (এমকেপি), সন্দীপ পাল (সিপিবি), সেরাজ নোমানি, শ্যামল চক্রবর্তী (টিএমসি), বরুণ দাস, জয়ন্তী দাশগুপ্ত, মলয় ব্যানার্জি (পর্বতারোহী), ভানু সরকার, মৈত্রেয়ী বিশ্বাস, নবেন্দু দাশগুপ্ত, নারায়ণ দে, সুব্রত সেনগুপ্ত। সঞ্চালক ছিলেন পার্টির জেলা কমিটির সদস্য শিবশঙ্কর গুহরায়।

খণ্ড-29
সংখ্যা-49