বিবৃতি
পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান করতে হবে এবং হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পে তাদের ব্যবহার করা চলবে না
the-problem-of-migrant-workers

বিজেপির ছড়ানো মিথ্যা, ভুয়ো খবর, গুজব ও শ্রমিক-বিরোধী নীতিকে প্রতিরোধ করুন! 
পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও জীবনধারণের মজুরির নিশ্চয়তার জন্য কেন্দ্রীয় আইন তৈরি করতে হবে! 
স্থানীয় স্তরে কাজের সুযোগ বৃদ্ধিকে নিশ্চিত করতে এমএনআরইজিএ’কে শক্তিশালী করতে হবে!

গত এক সপ্তাহ ধরে সমাজ মাধ্যমে বিহার ও উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্য থেকে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর আক্রমণ নিয়ে ভুয়ো খবরের বন্যা বইল। হোলির জন্য পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি যাওয়ার তাড়াহুড়োকে তাদের ওপর আক্রমণের পরিণামে তামিলনাড়ু ছেড়ে চলে যাওয়া বলে অসৎ উদ্দেশ্যে অভিহিত করা হতে লাগল। এরপর এই ভুয়ো খবরের সত্যতাকে যাচাই না করেই বিভিন্ন মিডিয়া চ্যানেল ও সংবাদপত্র সেগুলোকে ধরে প্রচার করতে লাগল। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় ‘দৈনন্দিন ভাস্কর’ সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্টের কথা যাতে জানানো হলো তামিলনাড়ুতে ১৫ জন বিহারি পরিযায়ী শ্রমিক নিহত হয়েছে এবং বিহার থেকে আসা অন্যান্য পরিযায়ী শ্রমিকদের তালিবান ধরনের আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে। আমরা দাবি জানাচ্ছি, যেসব সংবাদ মাধ্যম পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে ত্রাস ও আতঙ্ক সৃষ্টি এবং জনগণের মধ্যে ভাষাভিত্তিক বিবাদ ও বিভেদ উস্কিয়ে তোলার উদ্দেশ্যে শ্রমিকদের ওপর আক্রমণের জাল ভিডিও পোস্ট করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

যে সংঘ পরিবার তামিলনাড়ুর অধিবাসীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে, তাদের ভ্রষ্টাচারকে আমরা ধিক্কার জানাই। কোভিড সংকট কালে পরিযায়ী শ্রমিকদের এক নির্মম লকডাউনের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল, হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ও তাদের পরিবারদের পায়ে হেঁটে শত শত কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বাড়ি পৌঁছোতে হয়েছিল। সংঘ বাহিনী আরও একবার তাদের রাজনৈতিক অভিসন্ধিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের ব্যবহার করে নিতে চাইছে।

মোদী সরকার দেশের শ্রমজীবী জনগণের বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্ন আক্রমণ হানছে, তাদের চালিত নয়া উদারবাদী অর্থনৈতিক নীতি শ্রমিক শ্রেণীর জন্য বিপর্যয় ডেকে আনছে। তীব্র খরা/বন্যা, কৃষিতে অব্যাহত দুরবস্থা, কাজের সুযোগের সংকোচনের ফলে গ্রামীণ ভারত কর্মসংস্থানের তীব্র সংকটে জর্জরিত। এরফলে প্রচুর সংখ্যক শ্রমজীবী জনগণ পরিযায়ী হচ্ছেন। নারী ও বয়স্করা কর্মহীন হয়ে পড়ছেন। এই পরিস্থিতিতে এমএনআরইজিএ প্রকল্পই গ্রামীণ কর্মসংস্থানের একমাত্র উৎস হয়ে উঠেছে। কিন্তু, মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে কাজের এই প্রকল্পে বিপর্যয় ঘটিয়ে চলেছে। বাজেটে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে বরাদ্দ ৩৩ শতাংশ হ্রাস করা হয়েছে যার ফলে কোটি কোটি শ্রমিক কাজ চাইলেও তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কাজ শেষ করা সত্ত্বেও শ্রমিকদের যথা সময়ে মজুরি না দিয়ে এমএনআরইজিএ’র উদ্দেশ্যকে সচেতনভাবে ব্যর্থ করা হচ্ছে। কর্ম নিশ্চয়তার এই প্রকল্পের অধীনে ‘জীবনধারণের পক্ষে নিতান্তই স্বল্প মজুরি’ দিয়ে জনগণকে উপযুক্ত জীবিকা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। শহরগুলোতে শ্রমিকদের এমন পরিস্থিতিতে কাজ করতে হচ্ছে যেখানে শ্রম হলো অবিধিবদ্ধ, কাজের সময়কাল ১২ ঘন্টা ছাড়িয়ে যায়, কোনো সচেতন ছুটির দিন থাকে না, পিএফ/ইএসআই’এর সুবিধা অনুপস্থিত, জীবনধারণের পরিস্থিতি নিকৃষ্ট, অবাধে মজুরি চুরি হয়, শ্রম আইনে সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা থাকেনা। পরিযায়ী শ্রমিকদের বিপদ সংকুল জীবনের এই সমস্যাগুলো সমাধান না করে মোদী সরকার এখন তাদের রাজনীতির নীল নকশায় ঐ শ্রমিকদের ব্যবহার করে নিতে চাইছে।

আয়ারলা ও এআইসিসিটিইউ ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের থেকে আতঙ্ক ও বিভেদ সৃষ্টির এই কৌশলকে প্রত্যাখান করার আবেদন শ্রমজীবী জনগণের কাছে রাখছে এবং দাবি জানাচ্ছে,

১) পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও জীবনধারণের উপযুক্ত মজুরি নিশ্চিত করতে একটা কেন্দ্রীয় আইন তৈরি করতে হবে। নিজেদের রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের এই সমস্ত সুরক্ষা প্রদানে রাজ্যগুলোকেও প্রকল্প তৈরি করতে হবে।

২) এমএনআরইজিএ’তে কাজের দিনের সংখ্যাকে বাড়িয়ে ২০০ দিন করে কাজের এই প্রকল্পকে শক্তিশালী করতে হবে। দৈনিক মজুরি বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করতে হবে এবং এই প্রকল্পে বকেয়া মজুরি অবিলম্বে মিটিয়ে দিতে হবে। স্থানীয় স্তরে কাজের কার্যকরী সুযোগ সুনিশ্চিত করতে হবে।

৩) শহরাঞ্চল কর্ম নিশ্চয়তা আইন তৈরি করতে হবে।

– আয়ারলা-এআইসিসিটিইউ

খণ্ড-30
সংখ্যা-6