রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে নির্বাচনোত্তর রাজনৈতিক সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে
political-terrorism

নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস কবলিত এলাকা পরিদর্শন করতে গেলে প্রথম দিনে আক্রমণের মুখে পড়ে বাম-কংগ্রেস সংসদীয় প্রতিনিধি দল। গত ১০ মার্চ ২০২৩, বিশালগড় বিধানসভা কেন্দ্রের নেহালচন্দ্র নগর বাজারে নাশকতা মূলক অগ্নিকান্ডে ভষ্মীভূত ১৯টি দোকানঘর দেখতে যান। ভষ্মীভূত দোকানের সামনে পৌঁছানো মাত্র বাম-কংগ্রেসের যৌথ সংসদীয় প্রতিনিধি দলের উপর আক্রমণ সংগঠিত করে বিজেপি আশ্রিত দুর্বৃত্ত বাহিনী। দু’টি গাড়ি ভাঙচুর করে। তখন পুলিশ সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করার ফলে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে আত্মরক্ষা করতে বাধ্য হয়। মোহনপুর বিধানসভা কেন্দ্রের কলকলিয়া গ্রামে সংসদীয় প্রতিনিধি দলের উপরেও আক্রমণের চেষ্টা করে দুর্বৃত্ত বাহিনী। এতে প্রমাণিত হয় যে, রাজ্যে সাংসদদের পর্যন্ত নিরাপত্তা নেই। সাধারণ জনগণ তো দূরের কথা। ২ মার্চ ২০২৩ ভোট গণনা ও ফল প্রকাশের পরে রাজ্যজুড়ে বিজয় উল্লাসের নামে বহ্নিউৎসব চলছে। বিরোধী দলের কর্মী সমর্থকদের বাড়িঘর লুটপাট করে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে রাবার বাগান। জলাশয়ে বিষাক্ত ঔষধ দিয়ে জীবন জীবিকার উৎসকে ধ্বংস করা হচ্ছে নির্বিচারে। গোয়ালঘরে আগুন দিয়ে গাভী, ছাগল, হাঁস মুরগি জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। শারীরিক আক্রমণের শিকার বৃদ্ধ, বৃদ্ধা, শিশু, নারী সবাই। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের বই, খাতা সব পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিরোধী দলের পার্টি অফিস, কার্যালয় আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্রে এখনো পর্যন্ত এক হাজারের উপর এধরনের অপরাধ সংঘটিত করা হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এফআইআর নেই। জীবন যেখানে বিপন্ন সেখানে আক্রান্ত জনগণ থানায় যেতে ভয় পাচ্ছে। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিতভাবে কোন মামলা নিচ্ছে না। অদৃশ্য শক্তির অঙ্গুলি হেলনে পুলিশ নিষ্ক্রিয় ও নীরব ভূমিকায়। যেমনটা আমরা গত পাঁচটি বছর ধরে দেখেছি। অথচ নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন চলাকালীন সময়ে ২ মার্চ ২০২৩ গণনা পর্যন্ত পুলিশ অনেক সক্রিয় ভূমিকায় ছিল। আইনের শাসন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। গুন্ডা রাজ, দুবৃত্ত রাজ কায়েম হয়েছে।

রাধাকিশোরপুর কেন্দ্রে উদয়পুর পৌর পরিষদ এলাকায় টাউন সোনামুড়া ক্যানাল সংলগ্ন এলাকায় সিপিআই(এমএল) পার্টি সদস্য কমরেড মহরম আলীর গাভী পালন ফার্মে একটি খড়ের কুজো আগুনে পুড়িয়ে দেয়। গত ৪ মার্চ ২০২৩, রাত্রি ১ টার সময় এঘটনা ঘটে। প্রতিবেশি জনগণের সহায়তায় অল্পেতে তাঁর ৩৮টি গরু রক্ষা পায়। পার্টি সদস্য কমরেড বিমল চক্রবর্তীকে কাঠের মিল থেকে তাড়িয়ে দেয়। কমরেড নুরুল ইসলাম খাদিমকে নির্মাণ কাজ থেকে তাড়িয়ে দেয়। ৩৫-বিলোনীয়া বিধানসভা কেন্দ্রে চিত্তামারা বাজারে রাজ্য কমিটির সদস্য কমরেড বাবুল পালের মুদি দোকান ৩ মার্চ সকালে বন্ধ করে দেয়। ৮ মার্চ রাতে কমরেড বাবুল পালের রাবার বাগান পুড়িয়ে দেয়। তাতে তাঁর ২৫০টি রাবার গাছ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ৫০-পাবিয়াছড়া (তপঃ জাতি সংরক্ষিত) আসনে কাঞ্চনবাড়ি রোড এলাকায় রাজ্য কমিটির সদস্য কমরেড লক্ষিন্দর দাসের দোকান ঘর সহ আরো ৮টি দোকান ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ত্রয়োদশ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-আইপিএফটি জোট ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছে। ২০১৮’র তুলনায় তাদের ১১ শতাংশ ভোট কমেছে। আসন সংখ্যা কমেছে ১১টি। মাত্র দু’টি আসন বেশি পেয়ে ক্ষমতাসীন হয়েছে। রাজ্য সভাপতি, উপমুখ্যমন্ত্রী হেরেছে। অন্যদিকে বিরোধীরা সবাই মিলে ৬০ শতাংশ ভোট পেয়েছে। বিরোধী ভোট বিভাজনের ফলেই বিজেপি কোনোরকমে ক্ষমতায় ফিরে এসেছে। তিপ্রা মথা দলের বিরাটভাবে উত্থান হয়েছে। সামনের লোকসভা নির্বাচনে তিপ্রা মথা দল বিজেপির সামনে চ্যালেঞ্জ। তাই তিপ্রা মথাকে সরকারে সামিল করার কৌশল গ্রহণ করেছে। নতুন রাজ্য সরকারের সংকট ও হতাশা থেকেই শুরুতেই বিরোধীদের উপর আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছে। যাতে বিরোধী দলগুলো কোনো রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালাতে না পারে। এই লক্ষ্যে এইরকম ফ্যাসিবাদী আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছে। সংসদীয় প্রতিনিধি দলের উপর আক্রমণ এরই অঙ্গ।

তাই রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে রাজনৈতিক সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে। জনগণের জীবন-সম্পত্তি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য সাংবিধানিক দায় দায়িত্ব পালনে রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানায় সিপিআই(এমএল) রাজ্য কমিটি। প্রতিটি সন্ত্রাসের ঘটনায় যুক্ত প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। রাজ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে শান্তি সম্প্রীতি ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হবে। সিপিআই(এমএল), ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি বাম-কংগ্রেস সংসদীয় প্রতিনিধি দলের উপর আক্রমণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার দাবি জানায়।

- সিপিআই(এমএল), ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি

খণ্ড-30
সংখ্যা-6