আজকের দেশব্রতী : ২৭ এপ্রিল ২০২৩ (অনলাইন সংখ্যা)
issue 27 april 2023may day call-aicctumay-day-call_1

ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, মজুরি সংকচন, বেসরকারীকরণ, নগদীকরণ, কোডের দাসত্ব ও দানবীয় আইনের বিরুদ্ধে লড়াইকে তীব্রতর কর!

২০২৩-কে জঙ্গি সংগ্রামের ঢেউ তোলার বছরে পরিণত কর!

২০২৪ সালের নির্বাচনে বিপর্যয়কর মোদী চালিত বিজেপি শাসনকে পরাজিত কর!

গণতন্ত্র বাঁচাও দেশ বাঁচাও!

ভারতে মে দিবসের শতবর্ষ পূর্ণ হল ! ১৮৮৬ সালে শিকাগোর শ্রমিকদের আত্মত্যাগের ৩৭ বছর পর ভারতে প্রথম মে দিবস পালন করা হয়। ২০২৩ সাল ভারতে মে দিবস পালনের শতবর্ষ পূর্ণ করল। চেন্নাইয়ের মেরিনা বিচে ১৯২৩ সালে মে দিবসে কমরেড সিঙ্গারাভেলার প্রথম মে দিবসের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। ১৮৮৬ সালের মে দিবস ৮-ঘণ্টা কাজের দাবিতে শ্রমিক শ্রেণীর আত্মত্যাগের দিন হিসাবেই চিহ্নিত হয়েছে। এই দিনটি সারা বিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির দিন হয়ে উঠেছে। কারণ এটি ছিল শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুদ্ধ ঘোষণার দিন, যা পরবর্তীকালে জয়ী হয়েছিল। বর্তমানে শ্রমিকদের কষ্টার্জিত মে দিবসের অধিকার উল্টো দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি ১ এপ্রিল থেকে শ্রমিক বিরোধী, দাসত্বের কোডগুলি কার্যকর করার মাধ্যমে ২০২৩ সালের মে দিবসের জন্য “উপহার” দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, ২০২৪ সালে লোকসভার সাধারণ নির্বাচনের কারণে, শ্রমজীবী মানুষ এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলির প্রতিক্রিয়ার ভয়ে এখন তা স্থগিত রাখা হয়েছে।

মোদি সরকারের আমলে শ্রমিক শ্রেণির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ও অসংখ্য আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। করোনার সুযোগ নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনা ছাড়াই বিজেপি পার্লামেন্টে শ্রম-বিরোধী চারটি আইনই পাশ করেছে। কলমের এক খোঁচায় সারা দেশে তা কার্যকর করার জন্য উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় থেকেছে। ইতিমধ্যে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি এর বিভিন্ন দিককে কার্যকর করা শুরু করেছে। যার মধ্যে রয়েছে ১২ ঘণ্টা কাজ, মহিলাদের রাতের শিফটে কাজ করা, ৩০০ জনের কম শ্রমিক আছে এমন শিল্পকে শ্রম আইনের আওতার বাইরে বার করে দেওয়া। এমনকি অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিও এর ব্যতিক্রম নয়। তাদের বেশিরভাগই ইতিমধ্যে কয়েকটি অংশকে বাদ দিয়ে মোদী সরকারের কেন্দ্রীয় নিয়মগুলিকে লাগু করেছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় স্তরের ফ্লোর লেভেল মজুরি প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা বিধিবদ্ধ করেছে। যখন কোডগুলো চালু হবে, তখন ন্যূনতম মজুরি বাধ্যতামূলক থাকবে না ও মজুরি হ্রাস হবে। এমনকি ডিএমকে-র মতো বিরোধীদের নেতৃত্বাধীন রাজ্যগুলি কর্পোরেট সংস্থাগুলির দাবি মেনে নিয়ে ফ্যাক্টরি আইনের থেকে কিছু শিল্প বা শিল্পের গ্রুপকে ছাড় দেওয়ার জন্য বিল পেশ করেছে। কর্পোরেট সংস্থাগুলোকে সস্তা শ্রমিক সরবারহের জন্য এবং গ্রামীণ কর্মীদের শহরে চলে আসার জন্য এমজিএনআরইজিএ প্রকল্পের বাজেট বরাদ্দ ব্যাপকভাবে কমানো হয়েছে।

সুপরিচিত অর্থনীতিবিদ জাঁ দ্রেজ ২০১৪-১৫ থেকে ২০২১-২২ সাল পর্যন্ত প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধির তীব্র হ্রাস সম্পর্কে চমকপ্রদ পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি বলেন, “২০১৪-১৫ এবং ২০২১-২২ সালের মধ্যে প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধির হার প্রতি বছর এক শতাংশের নিচে ছিল, আরও সঠিকভাবে, কৃষি শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক এবং অকৃষি শ্রমিকদের জন্য তা ছিল যথাক্রমে ০.৯%, ০.২% ও ০.৩%। অকৃষি শ্রমিকদের জন্য বেশ কয়েকটি রাজ্যে, উপরে উল্লিখিত সময়কালে হরিয়ানা, কেরালা, পাঞ্জাব, রাজস্থান এবং তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যগুলিতে প্রকৃত মজুরি হ্রাস পেয়েছে। কর্মসংস্থান ছাড়াও, সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিকদের প্রধান সমস্যা প্রকৃত মজুরির। নিম্ন-কর্মসংস্থান বা ছদ্ম-বেকারত্ব, কম মজুরি, মজুরি হ্রাস, ছাঁটাই, লকআউট, লে অফ, এবং কারাখানা বন্ধ করা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে, শ্রমিকদের প্রতিবাদ থেকে বিরত করতে বাধ্য করার কৌশল হিসেবে এইগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে। দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি সত্ত্বেও, মজুরি বৃদ্ধির মন্থর হার একটি বড় উদ্বেগের বিষয় এবং এর ফলে বৈষম্য এবং দারিদ্র্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

লিঙ্গভিত্তিক মজুরির বৈষম্য উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সম কাজে সম বেতন মহিলাদের দেওয়া হচ্ছে না। নারীদের যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না রেখে রাতের শিফটে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, ফলে তাঁরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আরএসএস-এর প্রস্তাবিত “সংবিধান” মনুস্মৃতি, নারীদের ঘরের চার দেয়ালে আবদ্ধ রাখতে চায়। দ্রুত গতিতে কর্মস্থল থেকে নারীকর্মীদের বিযুক্ত করা হচ্ছে।

তৃতীয় সুবিধা হিসাবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কর্মীদের পুরাতন পেনশন স্কিম চালু করা এখন প্রধান দাবি। সেখানে মোদি সরকার নতুন পেনশন স্কিমে পেনশনের মাত্রা সামান্য বৃদ্ধি করে শ্রমিকদের ক্রমবর্ধমান সংগ্রামকে বন্ধ করার চেষ্টা করছে। পেনশনভোগী এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলির নিরলস প্রচার এবং সংগ্রাম সত্ত্বেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, ইপিএস-এর ন্যূনতম পেনশন ১০০০ টাকা অতিক্রম করেনি৷

মোদি সরকার মুনাফা অর্জনের নামে আগ্রাসীভাবে সরকারী সেক্টরের সমস্ত সম্পত্তি তার কর্পোরেট বন্ধুদের কাছে বিক্রি করছে। এমনকি রাস্তা, বন্দর, বিমানবন্দরের মতো পরিকাঠামোও নগদীকরণের (মনেটাইজেশন) নামে রেহাই পাচ্ছে না। রেলওয়ের ব্যাপক বিস্তৃত নেটওয়ার্ক ভাগ ভাগ করে কর্পোরেটদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এমনকি রেহাই পাচ্ছে না রেলওয়ে স্কুল, হাসপাতাল থেকে শুরু করে ট্রেন, ট্র্যাক এবং স্টেশন পর্যন্ত।

শিল্পপতি এবং সরকারের কাছে সামাজিক সুরক্ষা দেওয়াটা এক বাধ্যতামূলক কর্তব্য। কিন্তু এবার, বীমা প্রকল্প চালু করার মাধ্যমে মোদি সরকার তার দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে। অসংগঠিত শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা দেওয়ার নামে, মোদী সরকার শুধুমাত্র বীমা এজেন্ট হিসাবে কাজ করছে – “ব্যবসা করাটা সরকারের কাজ নয়” বলে উচ্চস্বরে চিৎকার করে। নির্মাণ শ্রমিক বোর্ডসহ বিভিন্ন আইনের অধীনে থাকা কল্যাণ বোর্ডগুলো পরিকল্পিতভাবে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে ই-শ্রম হল মরীচিকা মাত্র। মৃত্যুকালীন দু’লক্ষ টাকা সুবিধা এবং স্থায়ী অক্ষমতায় এক লক্ষ টাকা সুবিধা ছাড়া আর কিছুই তাতে পাওয়া যায় না। ই-শ্রমের মাধ্যমে কল্যাণ বোর্ডের সুবিধাগুলোকে হ্রাস করার জন্য কঠোরভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

২০৪৭-এর জন্য মোদির দৃষ্টিভঙ্গি হল গিগ এবং প্ল্যাটফর্ম কর্মীদের মতো কর্মী বাহিনী তৈরি করা। এরা এমন একধরনের শ্রমিক যারা তাদের নিয়োগকর্তাদের কাছ থেকে চাকরির নিরাপত্তা, মজুরি নিরাপত্তা এবং সামাজিক নিরাপত্তার মতো কোনো আইনি সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী নয়। সর্বোপরি, তারা সামাজিক নিরাপত্তা কোড অনুসারে বড় জোর একটি বীমা প্রকল্প কিনতে পারে। এই শ্রেনীর কর্মীবাহিনী নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন মোদী। ভারত জি২০-এর সভাপতিত্ব গ্রহণ করার পরে, গিগ এবং প্ল্যাটফর্ম কর্মীদের মতো একটি কর্মীবাহিনী গড়ে তোলার জন্য এবং তাদের সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পগুলির জন্য তহবিলের স্থায়িত্বের বিষয়ে কাজ করার জন্য একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। শিল্প প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলি কর্পোরেট সংস্থাগুলির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে তৈরি করা হচ্ছে। তহবিল এবং প্রশিক্ষণ মডিউলগুলি কর্পোরেট চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রাখা হচ্ছে। আইটিআই-এর শিক্ষকদের একই কর্পোরেট সংস্থাগুলির দ্বারা প্রশিক্ষিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। মোদি, বিজেপি এবং আরএসএসের এমনই কর্পোরেট আনুগত্য।

কর্মীদের মরিয়া ও হতাশ করে, মোদি সরকার এমন এক পরিবেশ এবং কর্মীবাহিনী খুঁজছে যার মধ্য থেকে তারা তাদের জন্য পদাতিক বাহিনী নিয়োগ করতে পারে। “অগ্নিপথ” এর মাধ্যমে এমন একটি বিপর্যয়মূলক নকশা করা হয়েছে।

মোদি সরকারের উন্নয়ন আখ্যানের মডেল হল আরও বেশি বেশি বেসরকারীকরণ, আর তার মাধ্যমেই আরও বেশি কর্মসংস্থান, কর্পোরেটদের লক্ষ কোটি টাকা ছাড়। কর ছাড় যে কেবল একটি বড় প্রতারণা ও ধ্বংসাত্মক তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। দেশ এখন রেকর্ড বেকারত্ব ও সর্বোচ্চ চাকরি হারানোর সম্মুখীন। মোদির বন্ধু আদানি এবং আম্বানির নেতৃত্বে নির্বাচিত কয়েকটি কর্পোরেট হাউস বিপুল সম্পদ সংগ্রহ করেছে, অর্জন করেছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়িক সংস্থার তখমা। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আদানি পরিবারের মালিকানাধীন কর্পোরেট সাম্রাজ্য সাকুল্যে মাত্র বিশ হাজার চাকরি প্রদান করেছে। এই ঘটনাটির সবচেয়ে ভালোভাবে স্বরূপ উন্মোচন করেছে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট। কর্পোরেট হাউসগুলি বিশেষ করে আদানি যেভাবে সম্পদ আহরণ করছে তার নেপথ্য কাহিনী প্রকাশ করে দিয়েছে। এসবিআই এবং এলআইসি-র মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে জনসাধারণের সঞ্চিত বিপুল অর্থ আদানির সংস্থায় বিনিয়োগের মাধ্যমে আদানি আরও ধনী থেকে ধনীতর হচ্ছে।

মোদি সরকারের বহুমুখী আক্রমণের মুখে শ্রমিক শ্রেণী। কর্পোরেট দমন-পীড়ন কঠোর করা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হচ্ছে। এমনকি বিচার বিভাগকেও সরকারের নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। বিজেপি-আরএসএস জোট তাদের ঘৃণার রাজনীতিতে ইন্ধন যোগাতে তীব্র সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের দিকে ঝুঁকেছে। আরএসএস-বিজেপি জোট সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও বিষ উস্কে দিতে, বিশেষ করে মুসলমানদের দিকে নিশানা করা হচ্ছ। কর্পোরেট, সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্টদের পক্ষে ভোট সংগ্রহের জন্য ধর্মীয় উৎসবগুলিকে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার নাট্যশালা হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি অভিবাসী শ্রমিকদের দুর্দশাকে সাম্প্রদায়িক, জাতীয়তাবাদী ঘৃণা ও সহিংসতা উস্কে দিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। সর্বশেষ উদাহরণ হল তামিলনাড়ুতে অভিবাসীদের উপর হামলার জাল ভিডিও, পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিজেপি প্রচার করেছে। দুর্দশাগ্রস্থ অভিবাসী শ্রমিকরা মোদির কুমিরের কান্না দেখেছে যারা খাদ্য, জল এবং পরিবহন ছাড়া হাজার হাজার কিলোমিটার হাঁটতে বাধ্য হয়েছিল এবং লকডাউনের নামে একই সরকারের দ্বারা অকল্পনীয় দুর্দশা ও নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছিল।

২০২৩ সালের মে দিবসে শ্রমজীবী মানুষকে এই সংকল্প নিতে হবে — মোদি সরকারের এই ধরনের আক্রমণ এবং শ্রমজীবী মানুষকে বিভক্ত ও প্রতারণা করার বিরুদ্ধে, তাদের ঘৃণ্য পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কার্যকর মোকাবিলা করতে হবে।

শ্রমিক শ্রেণীকে তার সংগ্রামকে বহুগুণ তীব্র করতে হবে এবং একই সাথে মেহনতি জনগণের অন্যান্য অংশের সাথে একটি শক্তিশালী ও বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। শুধুমাত্র শ্রমিক শ্রেণীর ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামই এই আক্রমণগুলিকে প্রতিহত করতে পারে, যেমন ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল যা স্বৈরাচারী মোদী সরকারকে তিনটি কৃষক বিরোধী কালো আইন বাতিল করতে বাধ্য করেছিল। আমরা শ্রমিক শ্রেণীকে বেসরকারীকরণ, চুক্তিবদ্ধকরণ, বেকারত্ব, শ্রমবিধি এবং অনুষঙ্গী দানবীয় আইনের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনকে আরও জোরদার করার আহ্বান জানাই।

২০২৩ সালের মে দিবসে দেশের শ্রমজীবী মানুষ ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে গণতন্ত্র ও আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে বাঁচাতে শ্রমিকের প্রধান শত্রু বিজেপিকে পরাজিত করার শপথ নিন।

আসুন আমরা মে দিবসে শপথ নিই শ্রমিক বিরোধী, জনবিরোধী, দেশবিরোধী মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারকে উৎখাত করার!

মে দিবস দীর্ঘজীবী হোক!

অল ইন্ডিয়া সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ ট্রেড ইউনিয়ন


may-day-call_0                   
ambedkar and may day

পুঁজিবাদের নির্মম শোষণের মধ্যেই শ্রমিকের বেঁচে থাকার ন্যূনতম মানবিক অধিকার অর্জন করার লড়াইয়ের স্মারক মে দিবস। দিনে সর্বাধিক আট ঘণ্টা কাজ করার দাবিতে শিকাগো শহরের হে মার্কেটের লড়াইকে স্মরণে রেখে মে দিবস পালন করে সারা বিশ্ব।

শিল্প বিপ্লবের পর উনবিংশ শতকের শুরুতে ব্রিটিশ সোশ্যালিস্ট রবার্ট ঔয়েন প্রথম “আট ঘণ্টা কাজ, আট ঘণ্টা অবসর, আট ঘণ্টা বিশ্রাম” শ্লোগান সূত্রবদ্ধ করে সামনে আনেন। সারা দেশে সর্বক্ষেত্রে সমস্ত শ্রমিকদের জন্য সর্বাধিক আট ঘণ্টার কর্মদিবস প্রথম চালু হয় ১৯১৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে।

ভারত সরকারের শ্রম দপ্তর প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৩৭ সালের নভেম্বর মাসে। ১৯৪২ সালের জুলাই মাস থেকে শ্রম দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ শুরু করেন ডক্টর ভীমরাও আম্বেদকর। সেচ ও বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন এই দপ্তরের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল। আম্বেদকরের তত্ত্বাবধানে সেন্ট্রাল টেকনিকাল পাওয়ার বোর্ড (সিটিপিবি) স্থাপিত হয়। ২৭ নভেম্বর ১৯৪২ দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়ান লেবার কনফারেন্সের সপ্তম অধিবেশনে আম্বেদকর আট ঘণ্টা কর্মদিবস প্রণয়ন করেন। তার আগে ১৪ ঘণ্টা কর্মদিবস ছিল।

‘ন্যাশনাল এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি’ – জনপ্রিয় ভাষায় যা ‘এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ’ স্থাপন করেছিলেন আম্বেদকর।

নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রচলন করতে অনেক ধৈর্য্য সহকারে লড়েছিলেন তিনি। নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন সুবিধা আইন, নারী শ্রমিক কল্যাণ তহবিল, নারী ও শিশু শ্রমিক সুরক্ষা আইন ইত্যাদি তাঁরই উদ্যোগে কায়েম হয়।

ইএসআই (এমপ্লয়িস স্টেট ইন্স্যুরেন্স) প্রবর্তন করেন আম্বেদকর। পূর্ব এশীয় দেশগুলির মধ্যে ভারতেই প্রথম কর্মচারীদের জন্য এরকম কোনো ইন্স্যুরেন্স অ্যাক্ট চালু হয়েছিল।

প্রভিডেন্ট ফাণ্ড, ডিএ (ডিয়ারনেস এলাওয়েন্স), লীভ বেনিফিট, পে স্কেল রিভিশন চালু করেন আম্বেদকর। খনি শ্রমিকদের জন্য আবাসন, পানি সরবরাহ, শিক্ষা, বিনোদন, সমবায় ব্যবস্থা প্রণয়ন করেন তহবিল গঠন করে।

ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক সংগঠনকে স্বীকৃতি প্রদান বাধ্যতামূলক করেন ১৯৪৩ সালে ‘ইন্ডিয়ান ট্রড ইউনিয়নস (এমেণ্ডমেন্ট) বিল’ এনে। ধর্মঘট করাকে শ্রমিকের আইনি অধিকার হিসেবে স্বীকৃত করেন। শ্রমিকের প্রতিনিধি যাতে শ্রমনীতি নির্ধারণে সম মর্যাদা সহ আলোচনায় অংশ নিতে পারেন তার জন্য ‘ট্রাইপার্টাইট লেবার কাউন্সিল’ বা ত্রিপাক্ষিক শ্রম পরিষদ প্রচলন করেন আম্বেদকর। শ্রমিক আন্দোলনকে বিরাট শক্তি জোগান। ন্যূনতম মজুরি আইনও ভারতে তাঁর উদ্যোগেই প্রথম প্রণীত হয়।

- মলয় তেওয়ারি

young force of inidayoung-workforce-a-blessing

এবার বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের আখ্যা পেল ভারতবর্ষ। রাষ্ট্রসংঘের পেশ করা বিশ্ব জনসংখ্যা রিপোর্ট জানাল, চলতি বছরের মাঝামাঝি চিনের ১৪২.৫ কোটি জনসংখ্যাকে ৩০ লক্ষের বেশি ছাপিয়ে ভারত হয়ে উঠবে বিশ্বেরে সবচেয়ে জনবহুল দেশ। সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতে জনসংখ্যার বয়সের গড় হার ২৮.২; এদিকে চিনে বয়সের গড় ৩৯ বছর। অর্থাৎ, গড় ভারতীয়রা চিনা জনসংখ্যার বয়সের তুলনায় ১০ বছর কম। ৬৫ শতাংশ ভারতীয়র বয়স এখন গড়ে ৩৫ বছরের কম।

ইতিমধ্যে গোটা জাপান বৃদ্ধতন্ত্রের দেশে পরিণত হয়েছে। ইতালিতে থমকে যাওয়া জনসংখ্যা আর্থিক বিকাশের ক্ষেত্রে বিরাট বিপদ ডেকে আনায় সেখানকার সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। পশ্চিমী দেশ বা ইউরোপের শ্রমশক্তি যখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ তখন জনসংখ্যাগত দিক থেকে ভারতে যৌবনের এই নবতরঙ্গ তাদের ঈর্ষান্বিত করছে বৈকি। কিন্তু জনসংখ্যায় তারুণ্যের এই আধিপত্য আশীর্বাদ নাকি বিপর্যয় ডেকে আনবে, তা নিয়ে নানান মহলে মাথা চাড়া দিয়েছে নতুন এক বিতর্ক।

ভারতে জনসংখ্যা যখন বাড়ছে, তখন দেখা গেল ৬১ বছরের মধ্যে এই প্রথম চিনের জনসংখ্যা কমল ৮৫০,০০০। ভারতেও বিগত কয়েক দশকে জন্মহার কমেছে। ১৯৫০ সালে যেখানে একজন ভারতীয় রমনী গড়ে ৫.৭ সন্তানের জন্ম দিতেন, বর্তমানে তারা জন্ম দিচ্ছেন গড়ে দুটি সন্তানের। শুধু চিন নয়, এশিয়ার অনেক দেশই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ভারতের থেকে বেশি সাফল্য পেয়েছে।

কিন্তু বিপুল এই তরুণ শ্রমশক্তি আজ বেকারত্বের শুকনো বারুদের স্তুপের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। দেশের অর্থনীতির বিকাশের পথে যা সবচেয়ে বড় অন্তরায়। সিএমআইই’র রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মার্চে ভারতের বেকারত্বের হার ছুঁয়েছে ৭.৮ শতাংশে যা এমনকি শহুরে ভারতের বেকারত্বকেও (৮.৫ শতাংশ) ছাপিয়ে গেছে। প্রতিবছর প্রায় ৫০ লক্ষ তরুণ প্রবেশ করে দেশের শ্রমশক্তির বাজারে। ভারতে বিনিয়োগ বৃদ্ধিও দিনের পর দিন কমছে। বিশ্বব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুসারে, ২০০০ থেকে ২০১০ এর মধ্যে দেশে বার্ষিক বিনিয়োগের গড় হার ছিল ১০.৫ শতাংশ, যা ২০১১ থেকে ২০২১ এ নেমেছে ৫.৭ শতাংশ হারে। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ, ভিয়েতনামে জনসংখ্যার গড় হার ভারতের তুলনায় বেশি হলেও বিনিয়োগ টানা ও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করার ক্ষেত্রে ভারত থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে, জানাচ্ছে সিএমআইই। শুধু সংখ্যার বিচারে নয়, দেশের আর্থিক বৃদ্ধি নির্ভর করে মানবসম্পদের দক্ষতার উপর, আর সে ক্ষেত্রে চিন এগিয়ে রয়েছে অনেকটাই। পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর ক্ষেত্রেও এটা একই ভাবে প্রযোজ্য। মূলত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের উপর নির্ভর করে চিন কৃষিপ্রধান দেশ থেকে রূপান্তরিত হয়েছে উৎপাদন ও পরিষেবা নির্ভর উন্নত অর্থনীতিতে।

ভারতের ক্ষেত্রে গতিপথটা একেবারেই উলটো। এখানে কৃষির উপর নির্ভরতা বাড়ছে। দেশের কর্মরত মানুষের প্রায় ৪৫ শতাংশ কৃষি ক্ষেত্রে নিযুক্ত। আমাদের দেশে ১৫-২৪ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা বিপুল — প্রায় ২৫ কোটি ৪০ লক্ষ। শোভন কাজ, ভদ্রস্থ মজুরি, শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সরকার যদি দৃষ্টি ফেরায়, তবেই এই নবীন প্রজন্ম সম্পদ হয়ে উঠবে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তাঁর “ডেভেলপমেন্ট অ্যাজ্ ফ্রিডম” বইয়ে লিখেছেন — তরুণ জনসংখ্যার সাফল্য নির্ভর করছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক পরিকাঠামোতে বিনিয়োগ বাড়ানোর উপর। তবেই, এই তরুণ ভারত আধুনিক অর্থনীতির বিকাশের জন্য অংশ নিতে পারবে।

UP custody murdermurder-in-police-custody-in-uttar-pradesh

উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের শাসন মডেলের যে দুটি চিহ্নকে সবচেয়ে গর্বের সাথে তুলে ধরা হয় তা হল বুলডোজার আর এনকাউন্টার। রাজ্য সরকারেরই প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর, ইউপি পুলিশ ১০,৭১৩টি এনকাউন্টার করেছে এবং অপরাধীদের চাপে রাখার ‘প্রধান কৌশল’ হিসাবে ‘এনকাউন্টার’-কে গ্রহণ করেছে। বিচার বহির্ভূত হত্যার এই কৌশলকে সরকার তার সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে গর্ব করে। এই কৌশল নাকি ইউপিকে অপরাধমুক্ত রাজ‍্যে উন্নিত করেছে। কিন্তু উমেশ পালের চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যোগী আদিত্যনাথ ইউপি বিধানসভায় দাঁড়িয়ে ‘মাফিয়াদের নিশ্চিহ্ন’ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও, যোগী মডেলের এনকাউন্টার নীতির কট্টর সমর্থকরাও বোধহয় আতিক আহমেদ ও তার ভাই আশরাফ আহমেদকে পুলিশী হেফাজতেই এরকমভাবে হত্যা করার কথা ভাবেনি।

গত ছয় বছরে ১০,০০০-এরও বেশি এনকাউন্টার চালিয়েছে বলে যারা দাবি করে সেই পুলিশের হাতে কিন্তু আতিক ও আশরাফ নিহত হননি। তাঁরা নিহত হয়েছেন তিনজন বন্দুকধারী যুবকের হাতে যারা হত্যাকাণ্ডের পর জয় শ্রী রাম স্লোগান দিতে দিতে শান্ত ভাবে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। পুলিশ নিজেদের হেফাজতে থাকা দুই ব্যক্তিকে বাঁচানোর জন‍্য কিছু করেনি। বন্দুকধারীরা নিজেরাই এসে আত্মসমর্পন না করা পর্যন্ত ওদের গ্রেপ্তার করার জন্যও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। পুলিশের এই সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়তা অপরাধী মোকাবেলায় এনকাউন্টার নীতি অনুসরণ করার দাবিকেই সম্পূর্ণরূপে বাতিল করে দেয়। প্রয়াগরাজ ঘটনাস্থলটিই তো প্রকৃতপক্ষে এনকাউন্টার পরিস্থিতির নিখুঁত এক উদাহরণ ছিল, কিন্তু পুলিশ সম্পূর্ণ নীরব ও নিষ্ক্রিয় দর্শক সেজে থাকাই শ্রেয় মনে করল। এই আপাত নিষ্ক্রিয়তার পেছনে কোনো গভীর কারণ জড়িয়ে আছে তা অনুপুঙ্খ তদন্তের মাধ‍্যমেই প্রকাশিত হতে পারে।

সবরমতি জেল থেকে প্রয়াগরাজে ট্রান্সফার করা থেকে শুরু করে শেষে পুলিশী হেফাজতে খতম করা পর্যন্ত – আতিক আহমেদ মামলা পরিচালনার পুরো প্রকৃয়াটির সমস্ত ধাপেই পুলিশী কর্তব‍্যকর্মের মূল নীতির লঙ্ঘন খুবই স্পষ্ট। হেলিকপ্টারে আকাশপথে আনা অনেক দ্রুত, সহজ ও সস্তা হওয়া সত্বেও তাঁকে সড়কপথেই আনার সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হল সেটাই তো প্রথম প্রশ্ন। গুজরাট থেকে উত্তরপ্রদেশে আনার মিডিয়া কভারেজের দিকে তাকালে স্পষ্ট হয় যায় যে উদ্দেশ্যই ছিল সমগ্র বিষয়টিকে একটা মিডিয়া ইভেন্টে পরিণত করা এবং মাফিয়ার বিরুদ্ধে যোগী কত্ত লড়াই করছে তা বিরাট করে দেখানো। মেডিকাল চেক-আপে নিয়ে যাওয়ার পথে আতিক এবং আশরাফের সাথে মিডিয়াকে যোগাযোগ করতে দেওয়াটাও নজিরবিহীন, এবং এটাই ঘাতকদের সুযোগ করে দিয়েছিল মিডিয়া পার্সন সেজে হত‍্যার পরিকল্পনা কার্যকর করার।

গভীর রাতে মেডিকেল চেকআপ করাতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তটিও একই রকম সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই বলেছে যে এরকম বিশেষ ঝুঁকি থাকা বন্দীর ক্ষেত্রে হাসপাতালে আনার বদলে যেখানে বন্দী ছিল সেখানে গিয়েই তো ডাক্তাররা চেকআপ করে আসতে পারত। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মদন লোকুর প্রশ্ন তুলেছেন যে, পরের দিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে অত গভীর রাতে মেডিকেল চেকআপ করার কী এমন বিশেষ তাড়া ছিল? বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা মিডিয়া চ্যানেলকে বলেছেন যে ঐ বন্দুকধারীরা পুলিশের গাড়িতেই এসেছিল। মেডিকেল চেকআপের জন‍্য আতিক ও আশরাফকে যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেই খবরও কি পুলিশই মিডিয়াকে দিয়েছিল? সাংবাদিক সেজে থাকা ঘাতকেরা খবরটা পেল কীভাবে? সংবাদ মাধ‍্যমের যেসব কর্মীরা এই ঘটনা কভার করছিলেন তাঁরা সকলেই তো পুলিশের পরিচিত স্থানীয় মানুষ - তাহলে তিনজন বন্দুকধারী, যাদের সকলেই বহিরাগত, সাংবাদিক পরিচয়ে ঘটনাস্থলে প্রবেশ করতে পারল কীভাবে?

শ‍্যুটার তিনজনের পরিচয়ও অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। তিনজন তিন ভিন্ন ভিন্ন জেলা থেকে এসেছে এবং তবু তারা অত্যন্ত সুসংহত ও সমন্বিতভাবে পুরো কাজটা সুসম্পন্ন করেছে। সমগ্র ঘটনাটি থেকে খুবই স্পষ্ট যে তারা যথেষ্ট প্রশিক্ষণ নিয়েই এবং ঘটনাস্থল সম্পর্কে সম্পূর্ণ পরিচিত হয়েই কার্য সমাধা করেছে। তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রগুলোও বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল আধা-স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। এবং বেশ কৌতূহলজনক ব‍্যাপার হল, পুলিশ ওই বন্দুকবাজদের মোকাবিলা করার কোনো চেষ্টা তো করেইনি, এমনকি ওরা আত্মসমর্পণ করার পর জিজ্ঞাসাবাদ করার আগ্রহও দেখায়নি, গ্রেফতারের পর তাদের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠাতেই রাজি হয়ে গেছে।

অন্তত একজন শ্যুটারের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল একটি শক্তিশালী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সাথে সম্পর্ক প্রকাশিত করে। হত‍্যাকাণ্ডের ভিডিও ক্লিপগুলিতে শ‍্যুটারদের পরিস্কার দেখা যাচ্ছে বারবার জয় শ্রী রাম বলে চিৎকার করতে। প্রথমে এই “জয় শ্রী রাম” ছিল ভিড়-হত‍্যার চিৎকার, তারপর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজদের ধ্বনি, শেষে এখন হয়ে উঠল ঘাতকের স্লোগান। বন্দুকবাজরা বিখ‍্যাত হওয়ার আশা নিয়ে আতিক ও আশরাফকে হত্যা করেছে বলেও শোনা গেছে। এই তিন বন্দুকবাজ যুবকের উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, এই সত্যটি এড়ানো যাচ্ছে না যে মাফিয়াদের বিরুদ্ধে যোগী আদিত্যনাথের তথাকথিত যুদ্ধ আসলে এক হিন্দুত্ব-পোষিত নয়া মাফিয়ারাজের উত্থান ঘটাচ্ছে যেখানে যুবকেরা শিক্ষা ও মর্যাদাপূর্ণ কাজের নিরাপদ ভবিষ‍্যতের দিকে এগনোর বদলে এখন রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত অপরাধ জগতে পা রাখছে।

দেশের আইনকানুন বা গণমাধ‍্যমের নীতিনৈতিকতাকে সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়ে কিছু গোদি মিডিয়া চ্যানেল এখন আতিকের স্ত্রী শায়েস্তা পারভীনের রক্ত চেয়ে কদর্য চেচামেচি শুরু করে দিয়েছে। আর সঙ্ঘ বাহিনী এই টেলিসম্প্রচারিত হত্যাকাণ্ডকেই কোনো অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি হিসাবে তুলে ধরে প্রচার চালাচ্ছে যে একমাত্র যোগীই এরকম শাস্তি দিতে পারে। মোদি যদি হয় সংঘের দুর্নীতি বিরোধী আইকন, তাহলে যোগী হল অপরাধ দমনের যুদ্ধে ওদের পোস্টার বয়। কেন্দ্রে মোদী শাসনের গত নয় বছরের অভিজ্ঞতা এবং ইউপিতে যোগী শাসনের ছয় বছরের অভিজ্ঞতা অবশ‍্য এই সঙ্ঘী প্রচারের প্রকৃত উদ্দেশ‍্য বোঝার জন‍্য যথেষ্ট। কৌশলগত স্তরে দেখলে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মোদির ক্রুসেড বাস্তবে বিরোধীদের নিশানা বানানোর এবং বিভিন্ন শিবিরের কলঙ্কিত নেতাদের বিজেপিতে যোগদানে প্রলুব্ধ করার এক ছক মাত্র। এবং রণনীতির স্তরে, ওদের দুর্নীতি বিরোধী বাগাড়ম্বর বাস্তবে সাঁটগাট পুঁজিবাদ এবং কর্পোরেট-নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনী ব্যবস্থার নির্লজ্জ দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ারই এক আবরণ হিসেবে কাজ করেছে। একইভাবে, মাফিয়ার বিরুদ্ধে যোগীর যুদ্ধ ন্যায়বিচার ও আইনের সাংবিধানিক শাসনের মৌলিক নীতিকেই খর্ব করছে, এবং তাকে প্রতিস্থাপিত করছে এক নিরন্তর ঘৃণামূলক অপরাধ ও সামরিক হিন্দুত্ব দিয়ে।

খুন হয়ে যাওয়ার দুই সপ্তাহ আগে আতিক যখন সুরক্ষার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন, তখন তাঁর আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়েছিল ‘তিনি ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রের হেফাজতে রয়েছেন’ - এই যুক্তিতে। এখন তো পুলিশের হেফাজতে মর্মান্তিক এই হত্যাকাণ্ডের মামলাটি সামনে থাকছে। এবারে তাহলে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করুক। হত্যার পিছনের ষড়যন্ত্রটিকে সম্পূর্ণরূপে উন্মোচিত করুক। এই জঘন্য অপরাধের আসল মাথা ও অপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করার সময় এখন এসেছে। প্রতিটি এনকাউন্টারের ঘটনায় বাধ্যতামূলক তদন্তের বিধান অলরেডি আছে। রাজ্য সরকারের স্বীকারোক্তি অনুযায়ি প্রায় দুই শতাধিক ‘এনকাউন্টারে মৃত্যু’ সংঘটিত হয়েছে। এরকম সাম্প্রতিক ঘটনাগুলির মধ‍্যে অন‍্যতম হল আতিকের ছেলে আসাদের হত্যা। এইসব এনকাউন্টারের ঘটনার একটিকেও কি আদৌ কোনও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে? সুপ্রিম কোর্টের সামনে এখনই উপযুক্ত সময় ইউপি সরকারকে থামানোর এবং এইভাবে লাগাতার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া থেকে বিরত করার।

পুলিশী হেফাজতে প্রয়াগরাজ হত্যাকাণ্ডকে উত্তরপ্রদেশে আইনের শাসনের পতনের একটি টেলিসম্প্রচারিত দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা চলে। এবং যখন মুসলমান ও দলিতকে আক্রমণের নিশানা বানানো মত্রাছাড়া চেহারা নিয়েছে, যারা মনে করেন যে সন্ত্রাস ও দায়মুক্তির এই বেলাগাম রাজত্ব নিয়ে অন্যদের অত ভাবার বা ভয় পাওয়ার কিছু নেই, তারা নিজেদের চোখকান একটু খোলা রাখলেই মঙ্গল। অ্যাপল কোম্পানির মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ বিবেক তিওয়ারি (লখনউ, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮), পুলিশ ইন্সপেক্টর সুবোধ কুমার সিং (বুলন্দশহর, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮), সাংবাদিক বিক্রম জোশি (২০ জুলাই, ২০২০), ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজার শিবম জোহরি (শাহজাহানপুর, ১২ এপ্রিল ২০২৩), কলেজ ছাত্র রোশনি আহিরওয়ার (জালাউন, ১৭ এপ্রিল ২০২৩) — এই তালিকা উত্তরপ্রদেশে প্রতি মুহূর্তেই লম্বা হয়ে চলেছে। যখন আইনের শাসন ভেঙ্গে পড়ে এবং শাসন পর্যবসিত হয় প্রাতিষ্ঠানিক অনাচার ও দায়মুক্তিতে, তখন তার গুনাগার সকলকেই দিতে হয় আজ হোক বা কাল। পুলিশী হেফাজতে প্রয়াগরাজের এই হত্যাকাণ্ড সকলের জন্যই ঘুম ভেঙে চোখ মেলে তাকানোর চূড়ান্ত এক বার্তা হওয়া উচিত।

- এমএল আপডেট এডিটরিয়াল, ১৮ - ২৪ এপ্রিল ২০২৩

22 apirl delhi programmeparty-foundation-day

সিপিআই(এমএল)-এর ৫৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং কমরেড লেনিনের ১৫৩ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশে পার্টি ইউনিটগুলি লাল পতাকা উত্তোলন এবং কমরেড লেনিন এবং কমরেড চারু মজুমদার সহ ভারতের জনগণের মুক্তির জন্য সর্বস্ব উৎসর্গ করা সমস্ত শহীদ ও প্রয়াত নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে দিনটিকে স্মরণ করে। সদস্য, সমর্থক এবং হাজার হাজার সাধারণ জনগণ “ধর্মীয় ও ভাষাগত বিভেদ ছিন্ন করে সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ঐক্য ও সংহতির বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে দিনরাত সক্রিয় থাকার” অঙ্গীকার গ্রহণ করেন, “শ্রমিক-কৃষক, নারী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলমান সবাইকে একে অপরের সঙ্গে দাঁড়াতে হবে এবং ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করতে এবং গণতন্ত্র ও দেশকে বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে।”

সিপিআই(এমএল) সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য দিল্লির কেন্দ্রীয় কার্যালয় চারু ভবনে পতাকা উত্তোলন করেন এবং শ্রদ্ধা জানান। তিনি পার্টির সকল সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীদের বিপ্লবী অভিবাদন জানান এবং ফ্যাসিবাদী আক্রমণের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করার জন্য সকলকে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মোদি সরকার সমস্ত দিক থেকে ব্যর্থ, এবং এখন মরিয়া হয়ে বিরোধীদের দমন করতে, বিচার বিভাগ সহ গণতন্ত্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে কুক্ষিগত করতে এবং নাগরিকদের প্রতিটি সাংবিধানিক স্বাধীনতাকে সীমিত করতে সর্বাত্মক অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অবশ্যই সিপিআই(এমএল)কে শক্তিশালী করতে হবে এবং জনগণের ব্যাপক ভিত্তিক ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

দেশব্যাপী হাজার হাজার পার্টি ব্রাঞ্চ দিবসটি উদ্দীপনা ও সংকল্পের সাথে উদযাপন করেছে। সিপিআই(এমএল) ১৯৬৯ সালের ২২ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক চারু মজুমদার কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে আয়োজিত একটি বিশাল সমাবেশে পার্টি ঘোষণা করেছিলেন। ভারতে বিপ্লবী দিশা প্রতিষ্ঠায় কমিউনিস্টদের অভ্যন্তরে দীর্ঘ আন্তঃপার্টি সংগ্রাম এবং ঐতিহাসিক নকশালবাড়ি কৃষক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পার্টির উত্থান ঘটে।

সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের ৫৪ বছর পর আজ মানুষ কর্পোরেট ফ্যাসিবাদী শক্তির আক্রমণের সম্মুখীন হচ্ছে এবং গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামকে শক্তিশালী করার এবং সংবিধানকে বাঁচানোর জন্য আমাদের সমাজে চলা নিরন্তর অনুসন্ধানের মধ্যে সিপিআই(এমএল)-এর ভূমিকা ও বিভিন্ন উদ্যোগ ব্যাপকভাবে স্বীকৃত হয়েছে।

সকল সদস্য সম্মিলিতভাবে ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করার শপথ পাঠ করেন, পতাকা উত্তোলন করেন এবং শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। প্রতিটি রাজ্যের বহু ব্লক এবং পঞ্চায়েতের পার্টি অফিস এবং খোলা জায়গায় গণ জমায়েতে স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।

- এমএল আপডেট রিপোর্ট

lenin's-birth-anniversary-were-celebrated                 
party-foundation-day

সারা রাজ্যের সমস্ত পার্টি অফিস সহ বহু ব্রাঞ্চে এবং স্থানীয় স্তরে ২২ এপ্রিল সকালে অথবা সন্ধ্যায় পার্টির প্রতিষ্ঠা দিবস তথা মহামতি লেনিনের জন্ম জয়ন্তী পালন করা হয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকার গ্রহণের মাধ্যমে। একাদশ পার্টি কংগ্রেস যে দিশা ও কর্তব্য পার্টির ওপর আরোপ করেছে এবং সমগ্র পার্টি যে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে তার তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা চলে। এই রাজ্যের নির্দিষ্ট বাস্তবতায় পার্টিকে শক্তিশালী করা এবং জনগণের মাঝে ব্যাপক ভিত্তিক ফ্যাসিবিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সামনে কিরকম সুযোগ ও সমস্যাগুলো আছে তা নিয়েও আলোচনা চলে। প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেদের সংগঠনের স্বাধীন কার্যকলাপ প্রসারিত করার সাথে সাথে সমাজের বিভিন্ন সংগ্রামের সাথে আন্তরিকভাবে একাত্ম হওয়া, তাদের উৎসাহিত করা, সমাজের বিভিন্ন নিপীড়িত সত্ত্বার আন্দোলনের গণতান্ত্রিক অন্তর্বস্তুকে অনুধাবন ও আত্মস্থ করা ইত্যাদি দিকও চর্চায় উঠে আসে। ফ্যাসিবাদকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে হলে সকল পার্টি কর্মীকে মতাদর্শগতভাবে শক্তিশালী হওয়ার এবং আপৎকালীন তৎপরতায় সদা সর্বদা সক্রিয় থাকার প্রয়োজনীয়তা সামনে আসে। পত্রিকার দপ্তরে আসা বিভিন্ন রিপোর্টের অল্প কিছু টুকরোই আমরা পত্রিকার এই সংখ্যায় তুলে ধরতে পারছি।

হুগলি জেলা

২২ এপ্রিল সকালে হুগলিঘাটে পার্টির জেলা অফিসে প্রতিষ্ঠা দিবসে লাল পতাকা তোলেন বর্ষীয়ান কমরেড মাণিক দাশগুপ্ত। উপস্থিত ছিলেন কমরেড জেলা সম্পাদক ও ব্যান্ডেল-চুঁচুড়া এলাকার মহিলা, শ্রমিক সহ অন্যান্য কমরেডরা। কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বান পাঠ করে পার্টিকে শক্তিশালী করার শপথ নেওয়া হয়। জেলার শহরাঞ্চলে চুঁচুড়ার খাগড়াজোল ব্রাঞ্চে মূলত শ্রমিক কমরেডরা মিলিত হয়ে প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বান ও পার্টি কংগ্রেসের বার্তা নিয়ে আলোচনা হয়। চন্দননগর ব্রাঞ্চ ও ভদ্রেশ্বর অ্যাঙ্গাস জুটমিল ব্রাঞ্চে কমরেড লেনিনকে স্মরণ করা হয় এবং পার্টির প্রতিষ্ঠা দিবসে পার্টি গঠনের সঙ্গে যুক্ত কমরেডদেরকে স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক দিশা নিয়ে আলোচনা হয়। উত্তরপাড়া থানা এরিয়া কমিটির তত্ত্বাবধানে ঐ এলাকার ১১ টি'র মধ্যে ১০ টি ব্রাঞ্চেই সকালে পতাকা উত্তোলন, শপথবাক্য পাঠ ও শহীদ স্মরণ কর্মসূচি সংগঠিত হয় এবং ঐ এলাকার জেলা কমিটির সদস্যরা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রতিটি ব্রাঞ্চের কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকেন। নির্মাণ শ্রমিক কমরেডরা সুশৃঙ্খল ভাবে ২/৩ টি শাখার কর্মসূচি সংগঠিত করেন।

জেলার গ্রামাঞ্চলে এই সময়ে গ্রামীণ মেহনতীদের কিছু বুনিয়াদী দাবিদাওয়া নিয়ে ২৭ এপ্রিল ক্ষেতমজুর সংগঠনের তরফ থেকে ব্লকে ব্লকে ডেপুটেশন ও জমায়েতের জন্য প্রচার ও জনসংযোগ চলছে। তার মধ্যেই পার্টির কাজের এলাকার প্রায় সবকটি জায়গাতেই ২২ এপ্রিলের কর্মসূচি সংগঠিত হয়েছে। ধনিয়াখালির মল্লিকপুর পার্টি অফিসে লোকাল কমিটির বিভিন্ন ব্রাঞ্চের কমরেডরা সম্মিলিত ভাবে পার্টি প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করেন এবং সেখানে পার্টি কংগ্রেসের বার্তা নিয়ে আলোচনা হয়। পোলবা-দাদপুর ব্লকের সারাংপুর গ্রামে ও আমনান পঞ্চায়েতের বরুনানপাড়া ব্রাঞ্চে মূলত আদিবাসী মহিলা সাথীদের উদ্যোগে পার্টি প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করা হয়। পাণ্ডুয়া ব্লকের দ্বারবাসিনী ও সাঁচিতাড়া ব্রাঞ্চে পৃথকভাবে পতাকা উত্তোলন ও শপথবাক্য পাঠ করা হয়। বৈঁচি পার্টি অফিসে পতাকা উত্তোলন করা হয় সকালে এবং পরেরদিন সন্ধ্যায় সংগঠিত হয় কর্মীবৈঠক। ঐ লোকাল কমিটির অন্তর্গত কোঁচমালি ব্রাঞ্চের রায় পাড়ায় পার্টি কংগ্রেসের বার্তা নিয়ে আলোচনা হয়। কুলিপুকুর-সোনারগাঁওয়ে আদিবাসী মানুষদেরকে সংগঠিত করে ২২ এপ্রিল স্মরণ করা হয়। বলাগড় ব্লকের গুপ্তিপাড়া ব্রাঞ্চে পতাকা উত্তোলন ও শপথবাক্য পাঠের মধ্য দিয়ে ২২ এপ্রিলের কর্মসূচি সংগঠিত হয় এবং জিরাট, ডুমুরদহ সহ অন্যান্য এলাকায় ১১ দফা দাবিতে ২৭ এপ্রিল কর্মসূচির প্রচারের মধ্যে পার্টির প্রতিষ্ঠা দিবস স্মরণ করা হয়। গ্রামাঞ্চলের কর্মীবৈঠকগুলির আলোচনায় আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতিকাজ নিয়েও আলোচনা চলে।

party-foundation-day-celebrated

হাওড়া জেলা

২২ এপ্রিল বালি গ্রামাঞ্চলে দুর্গাপুর ব্রাঞ্চের উদ্যোগে সমবায়পল্লী নতুন বাজার এলাকায় পথসভা। বালি জোড়া-অশ্বত্থতলা শহীদ বেদি ও সরখেল পাড়া শহীদ বেদিতে রক্তপতাকা উত্তোলনে আইসার সাথীদের উপস্থিতি ছিল ভাল মাত্রায়। সন্ধ্যায় বালি পার্টি অফিসে বালি ১ ও ২নং পার্টি ব্রাঞ্চের বৈঠক হয়। কর্মসূচি হয় আড়ুপাড়া ব্রাঞ্চে। হারোপ ও বাঙ্গালপুর ব্রাঞ্চ মিলিতভাবে। মধ্য হাওড়ার এমসি ঘোষ লেন, কদমতলা ব্রাঞ্চ, ঘোড়াঘাটা স্টেশনে, বাগনান ১নম্বর ব্লকের ভূঞেড়া ব্রাঞ্চ, সাঁত্রাগাছি পার্টি ব্রাঞ্চ প্রভৃতি জায়গায় পার্টি প্রতিষ্ঠা দিবস তথা লেনিন জন্মজয়ন্তী পালিত হয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে।

দার্জিলিং জেলা

শিলিগুড়ির জেলা কার্যালয়ে পার্টি প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার। রক্ত পতাকা উত্তোলন করেন বর্ষীয়ান সদস্য গৌতম চক্রবর্তী। উপস্থিত কমরেডদের কাছে রাজ্য সম্পাদক ২২ এপ্রিলের আহ্বান ও সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেন সাংগঠনিকভাবে পার্টিকে আরও সুদৃঢ় করার আহ্বান রাখেন লোকাল কমিটির সম্পাদিকা মুক্তি সরকার ও । শক্তিগড়ের দুটি ব্রাঞ্চের ২২ এপ্রিলের অঙ্গীকার উপ্সথাপনা করেন শাশ্বতী সেনগুপ্ত।

রাঙাপাণীর নিমতলা বড়পথু ব্রাঞ্চ এবং ভতন জোত ব্রাঞ্চে জেলা সম্পাদকের নেতৃত্বে ২২ এপ্রিলের অঙ্গীকার বিস্তারিত আলচিত হয়। খড়িবাড়ির কুচিয়াজোতের মাঠে দুটি ব্রাঞ্চের ৩০ জন কর্মীর উপস্থিতিতে একটি সভা করা হয়। ২২ এপ্রিলের অঙ্গীকার সকলের সামনে রাখেন কমরেড খুফুর সিংহ, রামসুরজ মার্ডি। জেলা স্তরে আন্দোলনকে শক্তিশালী করার আহ্বান রেখে শেষ হয় সভা।

কলকাতা

কলকাতায় সকালে ধর্মতলায় লেনিন মূর্তির পাদদেশে পার্টির নেতৃবৃন্দের একাংশ জমায়েত হয়ে লেনিন মূর্তিতে মাল্যদান করার পর পার্টির সদর দপ্তরে শহিদ বেদীর সামনে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

যাদবপুর লোকাল কমিটি অফিস ও পাঁচটি ব্রাঞ্চে, বেহালায় কালিতলা, রবীন্দ্রনগর ও সরকারহাটে, ভবানীপুর এলাকায় কালিঘাট বাস্তুহারা বাজার মোড় ও যদুবাবুর বাজার মোড়ে, রামলালবাজার, গড়ফা মোড়, পালবাজার, সার্ভে পার্কে পতাকা তোলা হয়। এছাড়া গড়িয়া ব্রাঞ্চ গড়িয়া মোড়ে, বাঁশদ্রোণীর ব্রাঞ্চ মাস্টারদা সূর্য সেন স্টেশনে সকালে পতাকা উত্তোলন করে। সন্ধ্যায় ব্রাঞ্চগুলিতে কেন্দ্রীয় অঙ্গীকার নিয়ে আলোচনা হয়। কমরেডরা পার্টির ২২ এপ্রিল আহ্বান, ও কেন্দ্রীয় কমিটির তরফ থেকে প্রকাশিত পুস্তিকা এবং আগামী কিছু কাজের পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ আলোচনা করেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২টি ব্রাঞ্চ বিকালে একত্রে এক আলোচনা সভায় মিলিত হয়। সেখানে ছাত্র কমরেডদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ও গবেষক ছাত্ররাও উপস্থিত ছিলেন।

পার্টির রাজ্য অফিসে বিকালে এক আলোচনা সভা হয়। উত্তর কোলকাতার ছাত্রছাত্রী কমরেডরা, পূর্ব মধ্য কলকাতার লোকাল কমিটির সদস্যবৃন্দ, দেশব্রতীর সাথে যুক্ত কমরেডগণ ও পার্টি অফিস টিমের সদস্যরাও তাতে অংশ নেন। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা পার্থ ঘোষ ওই আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।

উত্তর ২৪ পরগণা

সকালে জেলা কার্যালয়ে পতাকা উত্তোলন করে ও লেনিনের প্রতিকৃতিতে মালা দিয়ে পার্টি প্রতিষ্ঠা দিবস ও লেনিন জয়ন্তী পালন করা হয়। ২২ এপ্রিল জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা ব্রাঞ্চগুলি বিকেল সন্ধ্যার দিকে বিশেষ সভার আয়োজন করে৷ সেইদিন ইদ উৎসব থাকায় কয়েকটি এলাকায় পরবর্তী কয়েকদিনেও ব্রাঞ্চ বৈঠকগুলি আয়োজিত হয়। বেলঘরিয়া, আগরপাড়া, কামারহাটি, রাজারহাট, নৈহাটি গ্রাম ও শহর, হালিশহর, জগদ্দল, অশোকনগর, বসিরহাট সহ নানা জায়গার ব্রাঞ্চ বৈঠকগুলির বেশিরভাগেই সদস্যরা ভালো সংখ্যায় উপস্থিত ছিলেন। কেন্দ্রীয় কমিটির পাঠানো শপথ পাঠ করা ছাড়াও পার্টি কংগ্রেসের বার্তা নিয়ে বৈঠকগুলিতে চর্চা হয়। ব্রাঞ্চকে শক্তিশালী কীভাবে করা যায় তা নিয়েও সদস্যরা মত বিনিময় করেন।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা

জেলা অফিস সহ ১০টি স্থানে কর্মসূচি পালিত হয়। নিশ্চিন্তপুর পঞ্চায়েতের সিংপাড়া, হালদারপাড়া, বৈষ্ণবপাড়া, জামালপুর দাসপাড়া, জামালপুর সেখ পাড়ায় এবং সোনারপুর-বারুইপুরের মল্লিকপুর স্টেশনের অটো-স্ট্যান্ডে পার্টি প্রতিষ্ঠা দিবসে কর্মসূচি পালিত হয়। বিষ্ণুপুর সাতগাছিয়ার রসপুঞ্জ ব্রাঞ্চের উদ্যোগে রসপুঞ্জ মোড়ে এবং উস্থির একটি স্থানে কর্মসূচি পালিত হয়। বিকালে নিশ্চিন্তপুর পঞ্চায়েত ১ নং লোকাল কমিটি ও বিষ্ণুপুর সাতগাছিয়া লোকাল কমিটির উদ্যোগে দুটি স্থানে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বানের উপর আলোচনা সভা আয়োজিত হয়।

darjeeling conventionin-naxalbari

নকশালবাড়ি অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে টিএমসি-র মদতে জমি মাফিয়ারা জমি লুঠ করছে। জাল সার্টিফিকেট দেখিয়ে আদিবাসীদের জমি থেকে উৎখাত করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন নদী থেকে রাতের অন্ধকারে বালি ও মাটি লুঠ হচ্ছে। থানা প্রশাসন ও বিএলআরও দপ্তর এই ঘটনার সাথে যুক্ত। ফলে ধীরে ধীরে ক্ষোভ ধুমায়িত হচ্ছিল। এই সব ঘটনাকে ধরে বামপন্থী দল সমূহের বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ২৪ এপ্রিল নকশালবাড়ি ব্লকের হাতিঘিষা অঞ্চলের বড়ঝড়ুজোতের স্কুলডাঙ্গি মাঠে (যে মাঠে ঐতিহাসিক নকশালবাড়ি আন্দোলনের সময় ১৯৬৭ সালের ২৪ মে প্রতিরোধ সংগ্রামে সোনম ওয়াংদি নামে পুলিশ অফিসার নিহত হন) এক গণ কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। অন্যান্য দুয়েকটি নকশালপন্থী গ্রুপ থাকলেও মূলত সিপিআই(এমএল) লিবারেশন ও সিপিআইএমের উদ্যোগে জমায়েত হয়। এই কনভেনশন পরিচালনা করেন পার্টির দার্জিলিং জেলা সম্পাদক পবিত্র সিংহ, সিপিআই(এম)-এর জেলা কমিটি সদস্য নিরোদ সিংহ প্রমুখ। কনভেনশনের মূল প্রস্তাব উত্থাপন করেন সিপিআইএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য গৌতম ঘোষ। প্রস্তাবনার উপর বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এমএল) রাজ্য কমিটির সদস্য বাসুদেব বসু, সিপিআই(এম)-এর জেলা নেতা মাধব সরকার, কানু সান্যালপন্থী দলের স্থানীয় নেত্রী দিপু হালদার প্রমুখ। সভা থেকে সিদ্ধান্ত হয় প্রাথমিক ভাবে স্থানীয় প্রশাসন ও বিএলআরও দপ্তরকে সম্পূর্ণ অবহিত করা হবে। প্রশাসন কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ না নিলে বে-আইনিভাবে জমি দখল করা রুখতে ব্যাপক গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। সভার শেষে এক মিছিল হাতিঘিষা অঞ্চল পরিক্রমা করে জমি মাফিয়াদের হুঁশিয়ারি দেয়।

bankura depurationfarm-laborers-and-tribal-organizations

বাঁকুড়ার ছাতনা ব্লকে ২৪ এপ্রিল আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চ এবং সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতি যৌথ উদ্যোগে গণ জমায়েত করে ডেপুটেশন জমা দেয়া হয়।

ব্লক ডেপুটেশনের দাবিগুলি ছিল

১) দীর্ঘদিন ধরে দখলে থাকা বনের জমিতে আদিবাসীদের পাট্টা দিতে হবে। প্রাপ্ত পাট্টার দ্রুত পরচা দিতে হবে।               
২) অবিলম্বে সর্বত্র ১০০ দিনের কাজ চালু করতে হবে এবং বকেয়া মজুরি দ্রুত মিটিয়ে দিতে হবে।               
৩) প্রকৃত গরীব মানুষদের আবাসের টাকা দিতে হবে এবং তা বাড়িয়ে ৫ লক্ষ করতে হবে।               
৪) আয়কর দেয় না এমন ৬০ বৎসরের উপর সমস্ত মানুষের বার্দ্ধক্য ভাতা চালু করতে হবে এবং তা বাড়িয়ে ৩০০০ টাকা করতে হবে।               
৫) প্রশাসনিক তদন্ত করে ভাগচাষি-লিজচাষিদের কৃষকবন্ধু প্রকল্পের মতো সবধরনের সরকারী সাহায্য করতে হবে।               
৬) সব গরিবদের বিনামূল্যে মাসে ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ দিতে হবে।

বনের জমির পাট্টা ও পরচার ব্যাপারে বিডিও নিজে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করার আশ্বাস দেন ও সাথেসাথে ভাগচাষি ও লীজচাষিদের কৃষকবন্ধু প্রকল্প চালুর ব্যাপারে পরিকল্পনার কথা বলেন। মাননীয়া রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে একটি মেমোরেন্ডাম পাঠানো হয়। এই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন আদিবাসী সংগঠনের পক্ষে রাজ্য নেতা রামনিবাস বাস্কে সহ সহদেব টুডু, সুকুরমণি, সারথি মুর্ম্মু ও অন্যান্যরা এবং আয়ারলা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বাবলু ব্যানার্জী।

রিপোর্ট - রামনিবাস বাস্কে

dr amartya senextends-bulldozer-raj

ভারতে এখন উচ্ছেদ-যুদ্ধ চলছে। বুলডোজার, যা কি না বিজেপির যোগী শাসনের সবচেয়ে গর্বের প্রতীক (এবং ভক্তদের শব্দভাণ্ডারে ন্যায়বিচারের সমার্থক), এখন সর্বব্যাপী হয়ে উঠেছে। শহরগুলিতে বস্তি ও কলোনিতে বসবাসকারী দরিদ্ররা, গ্রামে গ্রামে অনথিভুক্ত বসতবাড়ির জমিতে বসবাসকারী দরিদ্ররা এবং মুসলিমরা এই উচ্ছেদ যুদ্ধের সবচেয়ে সাধারণ নিশানা।

মতাদর্শগতভাবে ভিন্ন মত পোষণকারী এবং রাজনৈতিক বিরোধীরাও নিজেদের এই হামলার নিশানায় দেখতে পাচ্ছেন। প্রতিহিংসার ছোবলে লোকসভা থেকে ডিসকোয়ালিফায়েড হওয়ার পর আজ রাহুল গান্ধী তার সাংসদ কোয়ার্টারের চাবি সরকারে হাতে তুলে দিলেন। আর এই হামলা নিশানার তালিকায় ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘায়ু ও সক্রিয় পণ্ডিতদের একজন, ৯০ বছর বয়সী অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক অমর্ত্য সেনও রয়েছেন।

১৯৯৮ সালে তিনি অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে নোবেল মেমোরিয়াল পুরস্কার পাওয়ার পর বাজপেয়ী সরকার তাঁকে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারতরত্ন দিয়ে সম্মানিত করে। কিন্তু অধ্যাপক সেন এখন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, প্রয়োজনে বল প্রয়োগের হুমকি সহ, একটি উচ্ছেদের নোটিশ পেয়েছেন। ভারতের প্রথম নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অত্যন্ত ভালবাসা এবং প্রতাশা নিয়ে যে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করেছিলেন তা আজ ক্ষমতাসীন সংঘ-বিজেপি সংগঠনের দ্বারা অন্যান্য উৎকর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মতোই পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে অধ্যাপক সেন ১৯৪৩ সালে তাঁর পিতা আশুতোষ সেনের কাছে ইজারা দেয়া ১.২৫ একর জমির ১৩ ডেসিমাল জমি অবৈধভাবে দখল করেছেন। কর্তৃপক্ষের এই দাবি অধ্যাপক সেন নথিপত্রসহ প্রমাণ দাখিল করে খারিজ করেছেন। তথাপি সর্বশেষ উচ্ছেদের নোটিশে অধ্যাপক সেনকে ৬ মে’র মধ্যে বাড়ি খালি করতে বলা হয়েছে। ক্ষমতা-মাতাল প্রতিহিংসা-চালিত ঘৃণা-ভরা শাসন যে কত নীচে নামতে পারে তার সীমা পরিসীমা নেই।

দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা ও বৈচিত্র্যের যৌগিক সংস্কৃতিকে এবং নাগরিক অধিকার, কল্যাণ ও স্বাধীনতাকে অগ্রাধিকার দেয়া সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত করতে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার জন্যই ‘আর্গুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান’কে এই মূল্য চোকাতে হচ্ছে।

প্রফেসর সেন, লজ্জায় আমাদের মাথা নত হয়ে যাচ্ছে, এই নিপীড়নের রাজত্বের বিরুদ্ধে আপনার সাথে আমরা পূর্ণ একাত্মতা প্রকাশ করছি।

- দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, ২৩ এপ্রিল, সোশাল মিডিয়া পোস্ট থেকে অনূদিত, শিরোনাম আমাদের )

tada biharreleased-selectively-in-bihar

১৪ বছর কারাগারে পূর্ণ করেছে এমন ২৭ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে, অথচ আরওয়ালের ছয় জন গ্রামীণ দরিদ্র কর্মী - কমরেড জগদীশ যাদব, চুরামন ভগত, অরবিন্দ চৌধুরী, অজিত সাউ, লক্ষ্মণ সাউ, শ্যাম চৌধুরী, যারা ২২ বছরের বেশি সময় ধরে জেলে ছিলেন তাঁদের বাদ দেওয়া হল! এঁরা হচ্ছেন সেই চৌদ্দ জন কমরেডদের মধ‍্যে বেঁচে থাকা সদস্যরা যারা ২০০৩ সালে বিচারের নামে প্রহসনের মাধ‍্যমে টাডা আইনে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। এই ১৪ জন টাডা-বন্দীদের মধ্যে ছয়জন - কমরেড শাহ চাঁদ, মদন সিং, সোহরাই চৌধুরী, বলেশ্বর চৌধুরী, মাহাঙ্গু চৌধুরী এবং মাধব চৌধুরী - ইতিমধ্যে কারাগারে মারা গেছেন।

১৪ জন টাডাবন্দী কমরেডদের মধ্যে মাত্র একজন, কমরেড ত্রিভুবন শর্মাকে ২০২০ সালে হাইকোর্ট মুক্তি দিয়েছিল। তারপর থেকে তিন বছর অতিবাহিত হয়েছে, আরও একজন টাডাবন্দী জেলে মারা গেছেন, এবং এখন বন্দীদের এইভাবে বেছে বেছে মুক্তি দেওয়ার মাধ‍্যমে ঐ ভুক্তভোগীদের উপর আরও একবার অবিচার করা হল যারা ইতিমধ্যেই বিহারের জেলে তাঁদের জীবনের দুই দশকেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন।

বন্দীদের মুক্তির নীতি অবশ্যই সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হওয়া দরকার। সমস্ত টাডা-১৪ বন্দীদের মুক্তি দিন। নিষেধাজ্ঞা আইনে অন্যায়ভাবে অবরুদ্ধ সকল নির্যাতিত দরিদ্র মানুষকে মুক্তি দিন।

- দীপাঙ্কর ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক, সিপিআইএমএল

dalit girl burnmiscreants-during-yogi's-reign

উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের এনকাউন্টার রাজ যে দুর্বৃত্তদের অপরাধ সংঘটনের প্রবৃত্তিতে তেমন লাগাম পরাতে পারেনি, একের পর এক ঘটনায় তা প্রকট হচ্ছে। পুলিশি হেফাজতে “জয় শ্রীরাম” বুলি আশ্রয় করা দুর্বৃত্তদের হাতে আতিক আহমেদ ও তার ভাই আশরফের হত্যা যখন উত্তরপ্রদেশে আইনের শাসনের শোচনীয় পরিস্থিতিকে সর্বত্রই এক চর্চার বিষয় করে তুলল, ঠিক তখনই উন্নাও থেকে এল দুষ্কৃতীদের সংঘটিত হাড় হিম করা অপরাধের এক সংবাদ। উন্নাও হলো সেই জেলা যেখানে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাওয়ার পথে ২৩ বছরের এক ধর্ষিতাকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মেরেছিল পাঁচ অভিযুক্ত। উন্নাও সেই জেলা যেখানে বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গার এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে এবং ধর্ষিতার বাবা ও দুই আত্মীয়কে খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়। তারপর ঐ ধর্ষিতা কোনো বিচার না পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বাড়ির সামনে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। উন্নাওয়ে এবারের ঘটনাটা ঘটে ১৭ এপ্রিল। সেখানে দলিত নাবালিকার কুঁড়েঘরে আগুন লাগানো হয় এবং তার সাত মাসের শিশু ও দু-বছরের বোনকে আগুনে ছুঁড়ে ফেলে দুষ্কৃতীরা। দলিত নাবালিকার মা পুলিশকে জানিয়েছেন, “ওরা মামলাটা তুলে নেওয়ার জন্য আমাদের চাপ দিচ্ছিল। ওরা আমাদের মারধর করে আর শিশু দুটোকে আগুনে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। আমার আর আমার মেয়ের সন্তান আগুনে পুড়ে যায়।” দুটি শিশুই যথেষ্ট মাত্রায় পুড়ে যাওয়ায় এবং অবস্থা সংকটজনক হওয়ায় তাদের উন্নাও থেকে পাঠানো হয় কানপুরের হাসপাতালে। 

একটু পিছিয়ে গেলে দেখা যাবে ঘটনার শিকড় রয়েছে ২০২২ সালে দলিত নাবালিকার ধর্ষণের মধ্যে। সে বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি ১১ বছরের দলিত নাবালিকাকে গণধর্ষণ করে দুই দুষ্কৃতী। ধর্ষণের ফলে সে বছরের সেপ্টেম্বরে নাবালিকা এক শিশুপুত্রের জন্ম দেয়। ধর্ষকদের গ্রেপ্তার করা হয়, এবং তারা জামিনও পায়। জামিন পেয়ে জেল থেকে বেরিয়ে আসার পরই তারা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য দলিত পরিবারের ওপর চাপ দিতে থাকে। এবং তার সাথে যুক্ত হয় হুমকি, হামলাবাজি এবং পরিবারের মধ্যেই বিভেদ সৃষ্টির কৌশল। অর্থের বিনিময়ে বা অন্য যে কোনোভাবেই হোক, দুষ্কৃতীরা নাবালিকার দাদু ও কাকাকে হাত করে। যেদিন নাবালিকাদের ঘরে আগুন লাগানো হয় তার চার দিন আগে ১৩ এপ্রিল নাবালিকার দাদু ও কাকা কুড়ুল দিয়ে তার বাবাকে আক্রমণ করে এবং বাবা আহত অবস্থায় এখনও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁর ওপর আক্রমণের পর তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালেও যোগীর পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

নাবালিকার পরিবারের ওপর আক্রমণের একটা উদ্দেশ্য যদি হয় চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে মামলা তুলে নিতে বাধ্য করা, অন্য উদ্দেশ্যটা তবে ছিল ধর্ষণের পরিণামে নাবালিকার গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশুপুত্রকে নিকেশ করা। ধর্ষণের কোনো চিহ্নকেই জিইয়ে রাখতে রাজি ছিল না দুই ধর্ষক ও তাদের দোসররা। কতটা পৈশাচিক হলে, মনুষ্যত্ববোধ কতটা নিঃশেষিত হলে সাতমাস ও দু-মাসের শিশুকেও আগুনে ছুঁড়ে ফেলা যায়! যোগী জমানা এই ধরনের দুষ্কৃতীদের উত্থানের পথ প্রশস্ত করছে, তাদের স্পর্ধাও জোগাচ্ছে।

উত্তরপ্রদেশে যোগী জমানায় অপরাধ গৈরিক মাত্রা অর্জন করেছে, ‘জয় শ্রীরাম’ আওয়াজে অপরাধ মান্যতা পাচ্ছে। গৈরিক মতাদর্শের প্রতি আনুগত্য জাহির করে দুর্বৃত্ত বাহিনী তাদের আধিপত্য চালায় – ধর্ষণ, লুট, তোলাবাজিতে মেতে ওঠে। লাভ জিহাদ ও গো-রক্ষার নামে মুসলিমদের প্রতি চলে অনাচারের ধারাবাহিক প্রবাহ। ভাষ্যকাররা বলে থাকেন, অপরাধ দমনকে রাজনৈতিক কৌশল করে তোলা হলে পছন্দমত যে কাউকেই অপরাধী বানিয়ে দেওয়া যায়। মুসলিমদের সাথে দলিতরাও তাই গৈরিক মতাদর্শের জমানায় আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে পড়ে। উন্নাওয়ে দলিত নাবালিকার ধর্ষণ ও তার শিশুপুত্রকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা হাথরসে দলিত যুবতীর নিষ্ঠুরতম নিপীড়নের ঘটনাকে মনে না পরিয়ে পারে না — যে যুবতীকে ধর্ষণের পর তার জিভ কেটে নেওয়া হয়েছিল, নিপীড়ন যার জীবনকে কেড়ে নিয়েছিল, যার মৃত্যুর পর পরিবারের অনুমতি ছাড়াই পুলিশ তাকে ডিজেল ঢেলে পুড়িয়ে দিয়েছিল। সেই ঘটনার পর ঠাকুর সম্প্রদায়ের অভিযুক্তদের বাঁচানোর অভিযোগ উঠেছিল পুলিশের বিরুদ্ধে। উন্নাওয়ের এই ঘটনাতেও ধর্ষিতা হলেন এক দলিত নাবালিকা এবং তার মা পুলিশের কাছে সেই দুষ্কৃতীদের নামগুলো বলে দিয়েছেন যারা তাদের মারধর করে কুঁড়েঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। যোগীর পুলিশ কি তাদের ধরে আইনি পথে শাস্তি দিতে সক্রিয় হবে? দলিত পরিবার কি ন্যায়বিচার পাবে? আর তা যদি না পায় তবে প্রকৃত বিচারটা গণ-আদালতেই হবে।

sonerpur ps custodynarendrapur-police-station

কুখ্যাত নরেন্দ্রপুর থানায় এবার দলিত যুবকের হেফাজৎ মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগ সৃষ্টি করল। ১৩ এপ্রিল কয়েকজন যুবককে মন্দিরের পাশে নেশা করার অভিযোগের অছিলায় বিনা ওয়ারেন্টে তুলে নিয়ে গিয়ে বাড়ির লোকজনের কাছে টাকা চাওয়া হয়। তুলে নিয়ে যাওয়া যুবকদের মধ্যে একজন ছিলেন সুরজিত সর্দার, যার বাড়ি থেকে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার পর আরও পাঁচ হাজার টাকা দিতে বাকি থাকায় তাঁকে নির্মমভাবে প্রহার করে মেরে ফেলা হয় গত ২১ এপ্রিল। জীবন্ত অবস্থায় বাড়ির লোকেদের তাঁর সঙ্গে দেখাই করতে দেওয়া হয়নি। মৃত্যুর পর বডি দেওয়া হয়। অসংখ্য গুরুতর আঘাতের দাগ ছিল সারা শরীরে। থানা এখন উল্টে পরিবারটিকে টাকা নিয়ে কেস মিটিয়ে নিতে বলছে।

গত ২৫ এপ্রিল সিপিআই(এমএল)’র পক্ষে তিনজনের এক প্রতিনিধি দল নিহত যুবকের গড়িয়ার বাড়িতে গিয়ে তাঁর মা, দাদা ও অন্যান্যদের সাথে কথা বলে ঘটনার অনুসন্ধান করে। সুরজিত স্থানীয় কে.কে. দাস কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রাবস্থায় পড়া ছেড়ে দিয়ে হোম ডেলিভারির কাজ করতেন। ভালো স্পোর্টসম্যান ছিলেন। দাদা ছোটখাট ব্যবসা করেন। বাবা কংগ্রেস দলের পরিচিত কর্মী ছিলেন। এখনও পর্যন্ত তাঁদেরকে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা দেখানো হয়নি। গ্রেপ্তারের খবরও তাঁরা অনেক পরে পেয়েছিলেন। কোন আক্রোশে পিটিয়ে মারা হল, তাঁরা এখনও বুঝতে পারছেন না। কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচী তাঁদের হয়ে মামলা লড়ছেন। কংগ্রেস, সিপিএম, এপিডিআর প্রভৃতির পক্ষ থেকে নানা প্রতিবাদী কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তাঁরা দায়ী পুলিশ অফিসারদের (আইসি অরিন্দম বিশ্বাস ও আইও অপূর্ব চক্রবর্তী) শাস্তি চান। দলমত নির্বিশেষে সকলকেই পক্ষে পেতে চান। তৃণমূল মিটিয়ে নিতে পরামর্শ দিচ্ছে। বিরোধী দল বিজেপি একেবারেই উদাসীন।

কুখ্যাত নরেন্দ্রপুর থানা। ছাত্রছাত্রীদের ওপর অত্যাচারের ঘা শুকাবার আগেই নাগরিক স্বাধীনতার ওপর আবার নতুন ঘা দিল বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করে লক আপে পিটিয়ে দলিতহত্যা করে। এর প্রতিবাদে এলাকায় স্থানীয় মানুষকে সামিল করে মিছিলের উদ্যোগ চলছে। প্রতিবাদে ২ মে বারুইপুর এসপির কাছে পার্টির প্রতিনিধি ডেপুটেশনের জন্য জানানো হয়েছে। শাসকদল এই ঘটনায় কিছুটা আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে রয়েছে বোঝা যাচ্ছে। দোষী পুলিশ আফিসারের শাস্তির দাবিতে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া হবে।

kaliaganj incidentdeep-conspiracy

গত ২৫ এপ্রিল বিক্ষোভকারী জনতার নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছিল কালিয়াগঞ্জ থানা প্রায় তিন ঘণ্টার জন্য।

তার মধ্যে যা যা ঘটেছে – আগুন, ভাঙচুর, ইট-পাটকেল-পাথর বৃষ্টি, স্থানীয় দোকানপাট ও ঘরবাড়ি লুঠ, পুলিশের লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো, জল কামান – এসব সংবাদমাধ্যমে বিস্তারিতভাবেই এসেছে। এই ঘটনার দায় এখন কেউ নিতে চাইছে না - না মিছিলের উদ্যোক্তা সংগঠনটি, না পিছনে থাকা ইন্ধনদাতা বিজেপি-আরএসএস। তারা ‘গণরোষের স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ’ বলে দায় এড়াচ্ছে।

এইসব তাণ্ডব আমরা সাম্প্রতিক কালে ধারাবাহিকভাবে দেখছি ‘রামনবমী’ বা অন্য কোনো অনুষ্ঠান বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বাংলায় যারা ‘প্রধান বিরোধীদল’ বলে বুক বাজিয়ে বলে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের উদ্যোগে ও প্রত্যক্ষ মদতে ঘটছে এসব। কালকের ঘটনা সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেল, কারণ শান্তি-শৃঙ্খলার রক্ষক পুলিশ নিজেই আক্রান্ত। এই ঘটনা ভাবাচ্ছে দ্বিবিধ কারণে। প্রথমত প্রশাসনের এই হাল হলে সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা কে দেবে? দ্বিতীয়ত রাজ্যবাসীর ক্ষোভের যথেষ্ট কারণ আছে, বর্তমান শাসকদলের দুর্নীতি, দৌরাত্ম্য দুরাচার নিয়ে। সরকারের অপদার্থতা নিয়ে। ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য মানুষ রাস্তায় নামছে, এমনকি বছর পার করে রাস্তায় বসে আছেন বহু মানুষ। কিন্তু বিক্ষোভের নামে এই ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, অরাজকতা সৃষ্টি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। মানুষের জন্য আন্দোলন, দলের জন্য নয়। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পরিসরে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে সেটা সব সময়ের জন্য মাথায় রাখতে হবে, নিজেদের সাংগঠনিক শিক্ষা ও কর্মসূচিতে তা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। শুধু তাই নয়, অরাজকতা সৃষ্টির যে কোন চেষ্টাকে দ্ব্যর্থহীনভাবে সমালোচনা ও প্রতিরোধ করতে হবে। তাৎক্ষণিক ‘লাভের’ জন্য মানুষকে হিংসা ও বিদ্বেষের পথে চালিত করে, বিভ্রান্ত করে বিধ্বংসী উন্মাদনায় যারা ক্ষেপিয়ে তোলে, তারা গণতন্ত্রের শত্রু। বিশ্বাসঘাতক। আর সেই অন্তর্ঘাতের কাজটা বেশ সুচারুভাবে শুরু হয়েছে এ রাজ্যে বিজেপি-আরএসএ-এর উদ্যেগে। চলুন, এবার মূল ঘটনায় ফেরা যাক।

কালিয়াগঞ্জের সেই নাবালিকা। বাবা পরিযায়ী শ্রমিক। দারিদ্র্যের সংসারে নানা চাপ, নানা সমস্যা। বয়ঃসন্ধিক্ষণের নানা অচেনা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। প্রতিবেশি এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া। ছেলেটি ভিন ধর্মের। সেটা নিয়ে বহু টানাপোড়েন। সালিশীসভার নামে আরও হেনস্থা, আরো মানসিক চাপ। কৈশোরের এই একান্ত অনুভূতিকে নিয়ে সমাজ সংসারের এই কুৎসিত লোফালুফি এবং সালিশি সভায় তার (সেই ভালোবাসার) মৃত্যু পরোয়ানা- কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি দশম শ্রেণির ছাত্রী কিশোরীটি। মানসিক নির্যাতনে (সেদিন বাড়িতে অল্প মাত্রায় শারীরিক নিগ্রহও চলে) বিপর্যস্ত মেয়েটি গভীর অবসাদে, রাতে পুকুর পাড়ে এসে কীটনাশকের বোতল থেকে (প্রায় ২৫০ মিলি লিটার – যেটা কেউ কাউকে জোর করে খাওয়াতে পারে না – ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা তিন চিকিৎসকের বোর্ড জানিয়েছে) তরল বিষ গলায় ঢেলে এলিয়ে পড়ে। মৃত্যুর আগে সে তার প্রেমিককেই শেষ ফোনটা করেছিল। বিপন্ন প্রেমিক গ্রামপ্রধানের পরামর্শ মেনে থানায় আত্মসমর্পন করে। সিপিআই(এমএল)-এর জেলা নেতৃত্বের প্রত্যক্ষ তথ্যানুসন্ধানের ভিত্তিতে এই বিবরণ দিতে পারছি আমরা। প্রাথমিক তথ্যে ভিত্তিতে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে যে এটি আসলে এক খাপ পঞ্চায়েতি অনার কিলিং বা আত্মহত্যায় বাধ্য করা। আরও অনুপুঙ্খ তদন্ত নিশ্চয় চলবে। কিন্তু এই মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পরবর্তীতে যা ঘটল বা বলা ভালো, ঘটানো হল – তা গভীর উদ্বেগের। দুশ্চিন্তার। এবং লজ্জার।

পরদিন সকালে অর্থাৎ ২১ এপ্রিল শুক্রবার তার নিথর দেহ উদ্ধার হয় বাড়ির কাছের পুকুরের ধার থেকে। তারপর থেকেই বিক্ষোভের নামে মৃতদেহ নিয়ে শুরু হয়ে যায় তাণ্ডব। অভিযোগ, মেয়েটিকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। যদিও মেডিক্যাল বোর্ড পুলিশকে জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী বিষক্রিয়াতেই মৃত্যু হয়েছে। শরীরে কোনো বড় আঘাতের চিহ্ন নেই। যৌন নির্যাতনের কোনো প্রমাণও মেলেনি। এটাও আরও তদন্ত সাপেক্ষ। কারণ ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এখনও আসেনি।

পালাইবাড়ি গ্রামটিতে হিন্দু-মুসলমানের পাশাপাশি বাস। সেখানে বিজেপি'র সংগঠনও আছে। তারা বিদ্যুৎ বেগে নাবালিকা-মৃত্যুর করুণ ঘটনাটি নিয়ে আসরে নেমে পড়ে। বিশেষত, অভিযুক্ত যখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। সাধারণ মানুষের বেদনা ও ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে, তাদের ক্ষেপিয়ে তুলে, মৃতদেহ আটকে রেখে টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে, বেছে বেছে সংখ্যালঘুদের দোকানপাট লুঠ করে, ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে ব্যাপক তাণ্ডব সৃষ্টি করা হয়। পুলিশ মৃতদেহ নিতে এলে ইটবৃষ্টি হতে থাকে। পুলিশ শূন্যে গুলি ছুঁড়ে, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে কোনক্রমে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়।

এর মধ্যে চটজলদি রায়গঞ্জের বিজেপি সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী, উত্তর মালদহের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু, বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদাররা সদলবলে চলে আসেন সাম্প্রদায়িক উস্কানিতে ইন্ধন যোগাতে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে কালিয়াগঞ্জ ও তার আশেপাশে সাত দিনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

শনিবার ছিল ঈদ। চারিদিকে সন্ত্রাসের আবহে স্থানীয় সংখ্যালঘু মানুষজন দীর্ঘ একমাস রমজান পালনের পর কাঙ্খিত উৎসবের দিনটিও ঠিকমত পালন করতে পারেননি। সম্পূর্ণ অকারণে গোটা সম্প্রদায়কে নিশানা করে ফেলা হল। পরবর্তীতে রায়গঞ্জেও বিক্ষিপ্তভাবে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চলে।

সিপিআই(এমএল) লিবারেশন-এর তথ্যানুসন্ধানকারী দল মৃতার গ্রামে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছেন। উত্তর দিনাজপুর জেলা কমিটি প্রথম বিশৃঙ্খলা রুখতে প্রশাসনের ব্যর্থতা ও নাবালিকার মৃতদেহের প্রতি পুলিশের চরম অমানবিকতার প্রতিবাদ জানিয়ে এবং গতকালের অরাজকতা সৃষ্টির জন্য বিজেপি-আরএসএস-কে প্রত্যক্ষভাবে দায়ী করে জনগণকে তাদের চক্রান্ত থেকে দূরে থাকার আবেদন জানিয়েছেন এবং জেলা সম্পাদক ব্রজেন সরকার ও জেলার রাজ্য কমিটি সদস্য তসলিম আলি উচ্চ পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে দুটি বিবৃতি জারি করেছেন।

কিন্তু কেন এই পরিস্থিতির উদ্ভব হল? একটি মৃত্যু মানুষকে ব্যথিত করে, শোকবিহ্বল করে, ক্রুদ্ধ বা ক্ষুব্ধও করতে পারে। কিন্তু এমন ব্যাপক আকারে অশান্তি ও নৈরাজ্য সৃষ্টি কেন? সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ সৃষ্টি কেন? জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন ‘নিরপেক্ষ’ তদন্তের নামে যা করছেন তাকে ‘দলীয়’ নির্দেশপালন এবং রাজ্যের সুস্থ পরিবেশ বিপন্ন করার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছু বলা চলে না। এ রাজ্যে মহিলা ও শিশু সুরক্ষিত - এমন অন্যায্য দাবি কেউ মানছেন না। গত সোমবার রাতেই মালদহের কালিয়াচকে আরেকটি দশম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষিতা ও খুন হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় মালদহের একটি যানবহুল রাস্তায় স্বামীর বাইকে চড়ে যাওয়ার সময় দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন আইনুল বিবি। এ রকম ধর্ষণ খুন শ্লীলতাহানি ও সম্মানহানির ঘটনা গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে। কিন্তু দেবশ্রী সুকান্ত শুভেন্দু সত্যিই যদি নারী সুরক্ষা নিয়ে এত চিন্তিত থাকেন তবে সেসব ক্ষেত্রে কেন মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন? যন্তর মন্তরে বিক্ষোভরত মহিলা কুস্তিগিরদের বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে অমিত শাহের পুলিশ কেন এফআইআর নেয় না? মধ্যপ্রদেশে ‘কন্যাদানের’ নামে যখন আদিবাসী মেয়েদের কুমারীত্ব ও গর্ভাবস্থা পরীক্ষার নামে চরম অসম্মান করা হল, তারা চুপ থাকলেন। অথচ এক্ষেত্রে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন! আসলে নির্লজ্জ বিজেপি-আরএসএস এক নাবালিকার মৃতদেহের ওপর দাঁড়িয়ে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে নিজেদের সংগঠনের পালে হাওয়া লাগাতে চাইছে। রাজ্যে একগুচ্ছ গোদি মিডিয়া চ্যানেল ক্রমাগত ইন্ধন দিয়ে গেছে। ভিনধর্মের ছেলে মেয়ের প্রেম ও তা নিয়ে বসা একাধিক সালিশী সভার কথা মিডিয়া প্রায় সম্পূর্ণ চেপে গিয়ে জনরোষ তৈরিতে আরএসএস-বিজেপিকে সুযোগ করে দিয়েছে। এই মুসলিম বিদ্বেষী, নারীবিদ্বেষী বিজেপি-আরএসএস বিলকিস বানোর খুনী-ধর্ষকদের সসম্মানে মুক্তি দেয়!

বাংলার মানুষ সতর্ক থাকুন এই আরএসএস-বিজেপি'র ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে!

delhi solidarityagainst-sexual-harassment

ব্রিজভূষণকে ডব্লিউএফআই চেয়ারপারসনের পদ থেকে বরখাস্ত কর, অবিলম্বে এফআইআর দায়ের কর এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ কর।

কেন ব্রিজভূষণকে আড়াল করছে মোদী সরকার। বেটি বাঁচাও-এর নামে নিপীড়ক বাঁচাও!

তিন দিন ধরে আমরা দেশের সবচেয়ে সম্মানিত কুস্তিগীরদের রাস্তায় বেরিয়ে আসতে দেখছি। তাঁরা সুবিচার চাইতে দিল্লির অসহনীয় দাবদাহ অগ্রাহ্য করে সাহসী প্রতিবাদ গড়ে তুলেছেন। এই সাহসী কুস্তিগীররা চরম হয়রানি, মানসিক নির্যাতন, সামাজিক বয়কট, এমনকি তাঁদের পুরো ক্যারিয়ার ধ্বংস হওয়ার ঝুঁকিও মোকাবাএলা করতে প্রস্তুত কারণ তাঁরা আর এই অন্যায় সহ্য করতে রাজি নন। ২০১৬ সালের অলিম্পিক পদক বিজয়ী সাক্ষী মালিক, প্রথম মহিলা কুস্তিগীর যিনি এই কীর্তি অর্জন করেছেন; এশিয়ান এবং কমনওয়েলথ গেমসের পদক বিজয়ী ভিনেশ ফোগাট, অলিম্পিক পদক বিজয়ী বজরং পুনিয়া এবং আরও অনেক কুস্তিগীর যারা তাঁদের খেলার সাধনায় নিজেদের রক্ত, ঘাম আর চোখের জল ঝরিয়েছেন, আজ তাঁরাই ডব্লিউএফআই প্রধানের দ্বারা যৌন হয়রানির প্রতিবাদে পথে নেমেছেন। তাঁদেরই একজন বলেন, “এই লড়াই ওরা শুধু নিজের জন্য ন্যায়বিচার চাইতে লড়ছে না, বরং পরবর্তী সমস্ত প্রজন্মের ক্রীড়াবিদ এবং মহিলাদের জন্য ন্যায়বিচার চাইতে লড়ছে। মাথার উপরে খোলা আকাশ হোক বা পায়ের নীচের তপ্ত পাথর- কোন কিছুই তাঁদের দমিয়ে দিতে পারবে না, তাঁরা ভারতের কৃষক ঘরের ছেলে-মেয়ে, সুবিচার না পাওয়া পর্যন্ত ওরা থামবে না।”

কনট প্লেস থানায় ব্রিজভূষণ শরণের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ দায়ের করেন সাত কুস্তিগীর। অভিযোগকারীদের নিরুৎসাহিত করার জন্য, দিল্লি পুলিশ এফআইআর দায়ের করতে অস্বীকার করে এবং গোপনীয়তা বিধি চরমভাবে লঙ্ঘন করে সাতজন অভিযোগকারীর নাম, যার মধ্যে একজন নাবালকও রয়েছে, জনসমক্ষে ফাঁস করে দেয় যাতে সংঘ বাহিনীর জালে তাঁরা আরও হয়রানি হন। এই বছরের জানুয়ারিতে এই কুস্তিগীররা দিল্লির যন্তর মন্তরে এসেছিলেন ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে। তখন তাঁদের প্রশমিত করা হয়েছিল তদন্তের মিথ্যা আশ্বাস তথা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে। আজ, তিন মাস পরে, ব্রিজভূষণ শরণ বিভিন্ন ন্যাশনাল নিউজ চ্যানেলে হাজির হয়ে নির্লজ্জভাবে নিজের সাফাই গেয়ে চলেছেন, অথচ তদন্ত এখনও বাকি  রয়েছে এবং একই সাথে মহিলা কুস্তিগীরদের ডব্লিউএফআই থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে এবং হুমকি দেওয়া হচ্ছে শুধুমাত্র তাদের কেরিয়ার নয় জীবনও ধ্বংস করে দেওয়ার, এমনকি তাঁদের পরিবারেরও। একদিকে, অভিযুক্তকে বিজেপি নেতৃত্ব সম্পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে এবং অন্যদিকে দিল্লি পুলিশ তাকে রক্ষা করতে উঠে পড়ে লেগেছে। অভিযোগকারীদের বয়ান অনুযায়ি এফআইআর দায়ের করা এবং নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনার পরিবর্তে স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের সমস্ত নিয়মনীতি নির্লজ্জভাবে লঙ্ঘন করে তাঁদেরকেই যৌন হয়রানির প্রমাণ সরবরাহ করতে বলে অভিযোগকারীদেরই অপরাধী হিসাবে দাঁড় করাতে চেষ্টা করা হচ্ছে। ডব্লিউএফআই-এর মধ্যে অভিযুক্তের প্রভাব অপরিসীম। এবং ভিনেশ ফোগাট জানিয়েছেন যে, কোনো সমালোচনা বা অভিযোগ জানালেই সাথে সাথে সামাজিক বয়কট শুরু হয় এবং অভিযোগকারীর কর্মজীবন ধ্বংস করে দেওয়ার হুমকি চলে। এই ক্রীড়াবিদরা যারা খুব সম্প্রতিও  তাাঁদের পদকের জন্য প্রশংসিত হচ্ছিলেন তাঁরাই এখন প্রকাশ্য আঘাত, হয়রানি এবং অপমানের শিকার হচ্ছেন। শুধুমাত্র এই কারণে যে তাঁরা এই অন্যায়ের সামনে নীরব দর্শক হয়ে থাকতে অস্বীকার করেছেন। শুধু মাত্র এই কারণে যে তাঁরা ন্যায় বিচার দাবি করেছেন। তাছাড়া আর কিসের জন্য? একজন যৌন নিপীড়ককে রক্ষা করতে এতসব? কেন? এই কারণেই যে তিনি ক্ষমতাসীন দলের সদস্য?

মোদী শাসনের দ্বারা ব্রিজভূষণকে এইভাবে নির্লজ্জ আড়াল করার ঘটনা আমাদের উন্নাওয়ের বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গারকে আড়াল করার, কাঠুয়া ধর্ষণের অভিযুক্তদের সমর্থন করার, বিজেপি নেতৃত্বাধীন গুজরাট সরকার দ্বারা বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। একই বিজেপি সরকারের অধীনে, বিএইচইউ? এর মহিলারা যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় এবং জিএসক্যাশ দাবি করায় লাঠিচার্জের মুখোমুখি হয়েছেন। দেখা যাচ্ছে, মোদি শাসন ‘নিপীড়ক বাঁচাও, বালাৎকারি বাঁচাও’ কলা ভালোই রপ্ত করেছে।

আজ, ২৬ এপ্রিল, আইপোয়া, আইসা, এআইসিসিটিইউ এবং আইলাজ-এর এক প্রতিনিধি দল প্রতিবাদী কুস্তিগীরদের সাথে সংহতি জানিয়ে যন্তর মন্তরে যায়  এবং ব্রিজভূষণ শরণকে অবিলম্বে বরখাস্ত করার এবং আর কোন বিলম্ব না করে এফআইআর নথিভুক্ত করার দাবি জানায়। যৌন হয়রানি, প্রাতিষ্ঠানিক দায়মুক্তি এবং ক্ষমতার সম্পূর্ণ অপব্যবহারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রতিবাদী কুস্তিগীরদের সংগ্রামকে সমর্থন করার জন্য আমরা সমাজের সকল অংশকে আরও একবার আবেদন জানাচ্ছি আমরা।

২৬ এপ্রিল ২০২৩         
এআইপিডব্লিউএ, এআইএসএ, এআইসিসিটিইউ,  আইলাজ

wage crisiscrisis-wages_0

(প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ জ্যাঁ দ্রেজ ১৩ এপ্রিলের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন "সংকটগ্রস্ত মজুরি" শিরোনামে। আমরা লেখাটির গুরুত্ব বুঝে তার ভাষান্তর এখানে প্রকাশ করলাম। - সম্পাদকমন্ডলী, দেশব্রতী)

প্রকৃত মজুরির বৃদ্ধিই হল ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচক। কিন্তু এই সূচকটাই আমাদের দেশে দারুণভাবে অবহেলিত। উদাহরণ স্বরূপ, সর্বশেষ প্রকাশিত ২০০ পাতার আর্থিক সমীক্ষার স্ট্যাটিসটিক্যাল অ্যাপেন্ডিক্স -এ মজুরি নামক শব্দটাই উধাও। এমনকি, অর্থমন্ত্রীর শেষ বাজেট বক্তৃতায়, বা তার আগের বছরের বাজেট ভাষণেও মজুরি শব্দটা কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

জনপরিসরে আর্থিক নীতি সংক্রান্ত বিতর্কগুলিতে প্রকৃত মজুরি কোন গুরুত্বই বহন করেনা। তার বদলে চলে “বেকারত্ব” সম্পর্কে অন্তহীন অবান্তর পরিসংখ্যান নিয়ে তুলনামূলক ভাবগম্ভীর আলোচনা।

বেকারত্বের শুকনো পরিসংখ্যান নিয়ে আমাদের দেশের গরিব মানুষদের কোন মাথাব্যথাই নেই। ভারতে হাতে গোনা গরিব মানুষেরা বেকার, কারণ বেকার হয়ে বসে থাকাটা তাদের সইবে না। কোনো শোভন কাজ না পেলে বেঁচে বর্তে থাকার জন্য হয় তাঁরা ডিম বেচবেন, নতুবা রিক্সা টানবেন। আর, পরিবার ভিত্তিক সার্ভের সময় এদের বেকার হিসাবে গণ্য করা হয়না। বেকারের বদলে এরা হলেন ছদ্ম বেকার বা প্রকৃত অর্থে কর্মরত নন। কিন্তু, এই ছদ্ম বেকারত্ব আমাদের দেশের সমীক্ষায় স্থান পায়না। বা, প্রকৃত অর্থে এটার পরিমাপ করা ভারি মুশকিল।

অন্যদিক থেকে দেখলে এটা বলতে হয় যে, প্রকৃত মজুরি কিন্তু অনেক তথ্য সরবরাহ করে থাকে। প্রকৃত মজুরি বাড়লে শ্রমিকরা বেশি আয় করবে, জীবনধারণের মানও কিছুটা উন্নত হবে। ধারাবাহিকভাবে প্রকৃত মজুরি বাড়াটা ভালো লক্ষণ, তাতে বোঝা যায় আর্থিক বৃদ্ধি উন্নত মানের কাজ তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছে। কিন্তু, অন্য দিকে, প্রকৃত মজুরি থমকে থাকলে দারিদ্র দূরীকরণের লক্ষ্য ধাক্কা খাবে।

অন্তত বেশ কয়েকটি পেশার ক্ষেত্রে প্রকৃত মজুরির বাড়া-কমাটা নজরে পড়ে। কৃষি শ্রমিকদের ক্ষেত্রেই ধরা যাক। ভারতের বেশিরভাগ গ্রামে যে কোন সময়ে ক্যাজুয়াল কৃষি শ্রমিকদের মজুরি কত তা বেশ ভালভাবেই জানা বোঝা যায়। এর জন্য ঘরে ঘরে গিয়ে সমীক্ষা করার কোন প্রয়োজন পড়ে না। গ্রাম স্তরে একটু খোঁজ খবর নিলেই তা জানা যায়। মাঝে মধ্যে, কিছুটা নিয়মিত ব্যবধানে বেশ কয়েকটি এলাকায় আমরা যদি এই সমীক্ষা চালাই, তবে মজুরির হার সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ছবি আমাদের সামনে ফুটে উঠবে। মূল্য সূচকের সাপেক্ষে প্রকৃত মজুরির হিসাব করাটা আদৌ কঠিন কাজ নয়।

শ্রম ব্যুরো বহু বছর ধরে এই কাজটাই করে আসছিল। পেশাভিত্তিক মজুরির পরিসংখ্যান প্রতি মাসে সারা ভারতের সমস্ত রাজ্য থেকে সংগ্রহ করার পর ব্যুরো সেই পরিসংখ্যানের সারাংশ প্রকাশ করে ইন্ডিয়ান লেবার জার্নালে। ওই সমস্ত তথ্যের গুণমান কিছুটা অনিশ্চিত হলেও প্রকৃত মজুরির প্রবণতাকে বোঝার ক্ষেত্রে তা ছিল যথেষ্ট।

এখন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এই কাজটা অনেক সহজ করে দিয়েছে। তার সর্বশেষ প্রকাশিত “হ্যান্ডবুক অফ স্ট্যাটিসটিক্স অন ইন্ডিয়ান স্টেটস্”-এ আরবিআই ২০১৪-১৫ থেকে ২০২১-২২ এর বার্ষিক মজুরির এক ছবি দিয়েছে, যা লেবার ব্যুরোর পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তিশীল। মজার ব্যাপার হল, এই তথ্য পরিসংখ্যানে কেবল পুরুষ শ্রমিকদেরই ধরা হয়েছে। এর আওতায় এসেছে চারটি পেশাগত গ্রুপ : সাধারণ কৃষি শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, অ-কৃষি কাজের সাথে যুক্ত মজুর, এবং বাগিচা শ্রমিক। এখানে শেষোক্ত গ্রুপটিকে ধরা হয়নি, কারণ, কেবলমাত্র কয়েকটা রাজ্য থেকেই বাগিচা শ্রমিকদের মজুরি সংক্রান্ত তথ্য এসেছে।

প্রকৃত মজুরির হিসাবটা সহজেই বার করা যায়। কৃষি মজুরদের ভোগ্য পণ্য সূচক (কনসিউমার প্রাইস ইন্ডেক্স ফর এগ্রিকালচারাল লেবারারস) এর সাপেক্ষে তারা যে মজুরি পাচ্ছেন, তাকে রূপান্তরিত করলেই প্রকৃত মজুরির হিসাবটা পাওয়া যায়। সেই হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০১৪-১৫ থেকে ২০২১-২২ এর মধ্যে সমস্ত ধরনের শ্রমিকদের ক্ষেত্রে প্রকৃত মজুরি বেড়েছে ১ শতাংশেরও কম; কৃষি মজুর, নির্মাণ শ্রমিক এবং অকৃষি মজুরদের ক্ষেত্রে প্রকৃত মজুরি বেড়েছে যথাক্রমে ০.৯ শতাংশ, ০.২ শতাংশ ও ০.৩ শতাংশ হারে। আমরা যদি ভোগ্যপণ্য সূচকের সাপেক্ষে এই বৃদ্ধি পরিমাপ করি, তবে দেখব বৃদ্ধির হার অনেক কম, আর নির্মাণ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে তা ঋণাত্বক হয়ে দাঁড়িয়েছে! 

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ২০২১-২২ এ এসে থেমে গেছে। কিন্তু, সাম্প্রতিকতম আর্থিক সমীক্ষার দিকে চোখ বোলালে দেখা যাবে, মজুরির এই থমকে থাকা হাল বজায় রয়েছে ২০২২ এর শেষ পর্যন্ত। এখান থেকে সহজেই এই উপসংহার টানা যায় : গত আট বছর ধরে সর্বভারতীয় স্তরে প্রকৃত মজুরির কোনও বৃদ্ধি হয়নি। এর আগে শম্ভু ঘটক এই একই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন।

রাজ্যওয়াড়ি ক্ষেত্রে এই একই চিত্র পাওয়া যায়। কৃষি মজুরদের প্রকৃত মজুরির কথাই ধরা যাক। এই পেশাগত গ্রুপটির প্রকৃত মজুরির বার্ষিক বৃদ্ধির হার দুটো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ২ শতাংশের সামান্য উপরে — কর্ণাটকে ২.৪ শতাংশ, এবং অন্ধ্র প্রদেশে ২.৭ শতাংশ। কিন্তু আরও পাঁচটা রাজ্যে ( হরিয়ানা, কেরল, পাঞ্জাব, রাজস্থান, ও তামিল নাড়ুতে) ২০১৪-১৫ থেকে ২০২১-২২-এ প্রকৃত মজুরি হ্রাসপ্রাপ্ত হয়েছে।

এখান থেকে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা উঠে আসে। প্রথমত, প্রকৃত মজুরির দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। মজুরি সংক্রান্ত পরিসংখ্যানকে আরও প্রসারিত ও উন্নত করতে হবে। ভারতীয় অর্থনীতির দ্রুততালে বৃদ্ধির বিরোধাভাসে প্রকৃত মজুরির খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলার এই নিদারুণ ও উদ্বেগজনক অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে।

সবশেষে বলতে হয়, এই বৈপরিত্য দাবি জানাচ্ছে, আর্থিক নীতির আমূল বদল আর মজুরি বৃদ্ধির উপরই প্রধান জোর দিতে হবে। পরবর্তী বাজেট ভাষণে কর্মসংস্থান ও মজুরি সম্পর্কে যদি দু-চার কথা থাকে, তবে বলা যাবে নতুন এক ইতিবাচক পর্বের সূচনা হতে যাচ্ছে।

ভাষান্তর অতনু চক্রবর্তী

satyapal and cbisatyapal-malik

দেশব্রতীর গত সংখ্যায় আমরা করণ থাপারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জম্মু ও কাশ্মীরের শেষ রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের তোলা অনেক বিষয়ের মধ্যে দুটো বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। সে বিষয় দুটো ছিল – ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় সিআরপিএফ জওয়ানদের ওপর সন্ত্রাসবাদী হামলায় ৪০ জনেরও বেশি জওয়ান নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জম্মু ও কাশ্মীরের তৎকালীন রাজ্যপালকে সরকারের ত্রুটি সম্পর্কে “চুপ” থাকতে বলা এবং মোদীর “দুর্নীতিকে তেমন ঘৃণা না করা” সম্পর্কে মালিকের অভিমত। আমরা দাবি জানিয়েছিলাম – মোদী যেন মুখে কুলুপ এঁটে না থেকে এই সমস্ত বিষয়ের জবাব দেন। কিন্তু মোদী মুখ বন্ধ করে রাখার কৌশলের ওপরই পুনরায় আশ্রয় নিলেন, কিন্তু তাঁর হয়ে আসরে নেমে অমিত শাহ সত্যপাল মালিকের কাছে কিছু জবাব চাইলেন। সে প্রসঙ্গে আমরা পরে আসব, এখন তাঁকে সিবিআই-এর পাঠানো নোটিশের তাৎপর্য নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা।

সত্যপাল মালিক জানিয়েছেন, জম্মু ও কাশ্মীরে দুটো প্রকল্প চালু করার প্রস্তাব তাঁর কাছে রাখা হয়েছিল। সেই প্রকল্প দুটোয় দুর্নীতির গন্ধ পেয়ে দুটো প্রকল্পকেই তিনি বাতিল করে দেন। প্রকল্প দুটোর মধ্যে একটা ছিল সরকারি কর্মচারীদের স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প, যেটার উদ্যোক্তা ছিল অনিল আম্বানির রিলায়েন্স জেনারেল ইনসিওরেন্স কোম্পানি। আর অন্যটা ছিল ২২০০ কোটি টাকার কিরু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, যেটা পাওয়ার জন্য মুখিয়ে ছিল বিজেপি ঘনিষ্ঠ এক কর্পোরেট সংস্থা। মালিক জানিয়েছেন, ঐ প্রকল্প দুটোর প্রত্যেকটার জন্য ১৫০ কোটি টাকা করে মোট ৩০০ কোটি টাকার ঘুষের প্রস্তাব ছিল, অর্থের যে প্রলোভনের কাছে মালিক নিজেকে বিকিয়ে দেননি।

এখানে উল্লেখ্য যে, ঐ দুটো প্রকল্পের জন্য, বিশেষভাবে অনিল আম্বানির স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পের জন্য মালিকের কাছে তদবির করতে গিয়েছিলেন আরএসএস ও বিজেপি নেতা রাম মাধব। প্রকল্পটা অনিল আম্বানিকে পাইয়ে দেওয়ার এতটাই স্পৃহা বিজেপি পরিচালনাধীন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনের ছিল যে, প্রকল্প অনিল আম্বানি পাচ্ছেন সে সম্পর্কে একেবারেই সংশয়হীন হয়ে প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার আগেই (যেটি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৮র ১৫ অক্টোবর) অনিল আম্বানির বিমা কোম্পানিকে ২০১৮-র ২৮ সেপ্টেম্বর চুক্তির প্রথম কিস্তি স্বরূপ ৬১.৪৩ কোটি টাকা দিয়ে দেওয়া হয়। পরে চুক্তি বাতিল হওয়ায় ঐ টাকা আম্বানির সরকারকে ফেরত দেওয়ার কথা। দুর্নীতি-দমন ব্যুরো ২০২০-র ৩০ ডিসেম্বর একটি নোট পাঠিয়ে আম্বানির কাছ থেকে ঐ টাকা পুনরুদ্ধারের কথা বলে – “সতর্ক করা এই নোটের মাধ্যমে এই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে, জম্মু ও কাশ্মীর সরকার চুক্তির মতৈক্যের ধারা অনুসারে রিলায়েন্স জেনারেল ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেড-এর কাছ থেকে বাকি ৪৪৩৯৯২৬১৮ টাকা (রিলায়েন্স সরকারি কর্মী ও পেনশন প্রাপকদের ১৭.০৩ কোটি টাকা দিয়েছে বলে জানায়) পুনরুদ্ধারের কথা বিবেচনা করতে পারে।” সত্যপাল মালিকও প্রকল্পটার মধ্যে যথেষ্ট ভ্রষ্টতার সন্ধান প্রথমে না পেয়ে তাতে অনুমোদন দিয়ে দেন। পরে প্রকল্পটার মধ্যে দুর্নীতির অস্তিত্ব টের পেয়ে সেটিকে বাতিল করেন এবং সাংবাদিকদের সামনে বলেন – “এটা ছিল কারচুপিতে ভরা”, এমনকি টেন্ডারগুলোও “গোপনে খোলা হয় একটা ছুটির দিনে যাতে বিশেষ এক কোম্পানিই সুবিধা পায়।”

সত্যপাল মালিক এই দুই প্রকল্পে দুর্নীতির প্রসঙ্গ প্রথম উত্থাপন করেন ২০২১ সালের অক্টোবরে। দুর্নীতির সেই অভিযোগ নিয়ে সিবিআই তদন্ত শুরু করে ২০২২ সালের এপ্রিলে এবং তারা এ নিয়ে দুটি এফআইআর-ও করে। সিবিআই এর আগে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মালিককে দুবার ডেকে পাঠিয়েও ছিল। তারা আবার নোটিশ পাঠিয়েছে কিছু বিষয়ে তাঁর কাছ থেকে “স্পষ্ট হওয়ার” জন্য। লক্ষণীয় যে, এই নোটিশ এসেছে পুলওয়ামার ঘটনায় সরকারি ত্রুটি এবং দুর্নীতি নিয়ে মোদীর মনোভাব সম্পর্কে সত্যপাল মালিক মুখ খোলার পর। সিবিআই-এর এই নোটিশ পাঠানোর মধ্যে কি শাসক তথা মোদী সরকারের কোনো অভিসন্ধি আছে? সিবিআই ও ইডির হাতে বিরোধী নেতাদের ইদানীং যেমন নাকাল হতে হচ্ছে, সিবিআই-এর হাতে সেই ধরনের হেনস্তা কি মালিকের জন্যও অপেক্ষা করছে? মালিক কিন্তু সেরকমই আঁচ করেছেন – “আমি সত্য কথা বলে কিছু লোকের পাপ প্রকাশ্যে এনেছি। বোধ হয় সে কারণেই ডাক এসেছে। আমি কৃষকের ছেলে, ভয় পাব না। সত্যের পক্ষে দাঁড়াব।”

মোদী এই প্রসঙ্গে মুখ না খুললেও দল ও সরকারের দ্বিতীয় ক্ষমতাশালী ব্যক্তি অমিত শাহ বলেছেন – “প্রশাসনের অংশ হিসাবে থাকার সময় কেন তাঁর অন্তরাত্মা জেগে ওঠেনি?” তিনি আরও বলেছেন, “জনগণ এবং সাংবাদিকদের বিশ্বাসযোগ্যতার কথা বিবেচনা করতে হবে। এ সব যদি সত্যি হয়, তবে রাজ্যপাল থাকার সময় তিনি মুখ খোলেননি কেন?” অমিত শাহ অতএব জনগণ এবং সাংবাদিকদের বলছেন যে, তাঁরা যেন সত্যপাল মালিকের তোলা প্রশ্নগুলোকে বিশ্বাস না করেন। কিন্তু এখানে প্রশ্ন হল – পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী হামলার পর নরেন্দ্র মোদী মালিককে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে “চুপ” থাকতে বলেছিলেন কি না? জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও একই পরামর্শ সত্যপাল মালিককে দিয়েছিলেন কি না? সিআরপিএফ জওয়ানদের নিয়ে যাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তরের কাছে বিমান চাওয়া হলে রাজনাথ সিং-এর মন্ত্রক তা দিতে অস্বীকার করেছিল কি না? নরেন্দ্র মোদীর দিক থেকে সত্য গোপনের যে অভিযোগ মালিক এনেছেন, হলফনামা দিয়ে অমিত শাহরা তাকে অস্বীকার করতে পারবেন? আর, রাজ্যপাল থাকার সময় যে কথা বলেননি বা বলতে পারেননি, এখন বললে সেগুলো কি মিথ্যা হয়ে যাবে? তবে, বাস্তব ঘটনা কিন্তু অমিত শাহর প্রশ্নের বিশ্বাসযোগ্যতা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় বলেই প্রতিপন্ন করছে, খন্ডন করছে রাজ্যপাল থাকাকালীন মালিকের কিছু না বলার তাঁর অভিযোগকে। দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ২৫ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে যে, পুলওয়ামা ঘটনার পরদিনই মালিক এনডি টিভিকে ফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “কোনো গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল না, কেননা, আমরা খবর পেয়েছিলাম (আক্রমণের সম্ভাবনা সম্পর্কে)। কিন্তু গাফিলতি অবশ্যই ছিল। সন্ত্রাসবাদীরা অত বড় একটা গাড়ি কোনো ধরনের নজরদারির মধ্যে না পড়েই আনতে পারল, সেটা অবশ্যই আমাদের দিক থেকে ব্যর্থতা ছিল।”

সত্যপাল মালিকের তোলা প্রশ্নগুলো নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সরকারকে স্পষ্টতই বিপাকে ফেলেছে। আর অমিত শাহ মালিক উত্থাপিত প্রশ্নগুলোকে সরাসরি অস্বীকার না করে সেগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সেই বেগতিক পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে চাইছেন। আর, মালিকের মোকাবিলায় হয়ত বা সিবিআই-এর ওপর ভর করছেন। 

সত্যপাল মালিক গত ২২ এপ্রিল হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ ও পাঞ্জাবের কিছু কৃষক নেতাকে তাঁর বাড়িতে ডেকেছিলেন। বাড়িতে সবার জায়গা না হওয়ায় বাড়ি সংলগ্ন পার্কে দুপুরে তাঁদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু দিল্লী পুলিশের বিশাল বাহিনী গিয়ে তাতে বাধা দেয় এবং বলে যে, পার্কে সভার অনুমতি নেই। কৃষক নেতাদের আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সত্যপাল মালিকও রাম কৃষ্ণ পুরম থানায় পৌঁছে কৃষক নেতাদের কেন আটক করা হলো তা জানতে চান। পুলিশ শেষমেষ সবাইকে ছেড়ে দেয়। কৃষক নেতারা সেদিন গিয়েছিলেন সত্যপাল মালিকের প্রতি সমর্থন ও সংহতি জানাতে। কানডালা খাপ-এর নেতা জগৎ সিং রেধু সেদিন বলেন, "আমরা এখানে সত্যপাল মালিকের সাথে দেখা করতে এসেছি, তিনি একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে তুলে ধরেছেন এবং সরকারকে তার উত্তর দিতে হবে। উত্তরপ্রদেশের কৃষকরা মোদীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, কেন্দ্র সরকার মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিলে তাঁরা বিশেষ পঞ্চায়েত ডাকবেন এবং “সত্যপাল মালিকের বিরুদ্ধে নিপীড়ন বন্ধের জন্য সরকারকে হুঁশিয়ারি দেবেন, অন্যথায়, রাজ্যব্যাপী প্রতিবাদের মুখোমুখি হওয়ার জন্য সরকারকে প্রস্তুত হতে হবে।” মালিকও এর আগে বলেছিলেন, “আমার গায়ে হাত দিলে ওরা ঝামেলায় পড়বে”, কেননা, “আমার একটা শক্তিশালী সম্প্রদায় (জাট)” এবং “কৃষকদের সঙ্গে সংহতি আছে।” সত্যপাল মালিক ও তাঁর কৃষক সমর্থকরা এইভাবে জানিয়ে দিলেন যে, মোদী সরকার তাঁদের হেনস্তায় উদ্যত হলে তাঁরা মুখ বুজে তা মেনে নেবেন না। পুলওয়ামার ঘটনা ও দুর্নীতি নিয়ে মোদীর ভূমিকার যে উন্মোচন মালিক ঘটালেন, তার মধ্যে দিয়ে কি মোদী-বনাম-মালিক লড়াইয়ের একটা সূত্রপাত ঘটল?

জয়দীপ মিত্র 

burning-in-flames

গভীর উদ্বেগজনক বার্তা নিয়ে এল রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটিয়োরোলজিকাল অর্গানাইজেশন। তারা জানাল, গত বছর ইউরোপ জুড়ে অস্বাভাবিক দাবদাহ বেশ কিছু দেশের তাপমাত্রার সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এর ফলে ১৫,০০০ এর উপর মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পরিবেশগত অন্যান্য অস্বাভাবিকতার তুলনায় তীব্র দাবদহে মৃত্যুর সংখ্যা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি।

"ইউরোপ একের পর এক তীব্র তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হয়েছে। তিনটি গ্রীষ্মকালীন মাসেই অন্তত একবার করে এই তাপপ্রবাহ এসেছে। ফলে গ্রীষ্মে স্পেনে মৃত্যুর সংখ্যা ৪,৬০০, জার্মানিতে ৪,৫০০, যুক্তরাজ্যে ২,৮০০ (এর মধ্যে ৬৫ বছরের ও তার ঊর্ধ্বে নাগরিকদের সংখ্যাই বেশি), ফ্রান্সে ২,৮০০ এবং পোর্তুগালে ১,০০০ মানুষের মৃত্যু হয় এই দু:সহ গরমে। বিশ্ব আবহাওয়া সংগঠন তার বাৎসরিক বিশ্ব জলবায়ু রিপোর্টে এই ছবি তুলে ধরেছে। ২২ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে পালিত হল বসুন্ধরা দিবস। সেদিনই প্রকাশিত এই রিপোর্ট আগামী দিনে ভয়ংকরতম এক ধ্বংসের চিত্রকে সামনে মেলে ধরল।

গত বছর ইউরোপের বেশ কিছু অঞ্চল অস্বাভাবিক তাপমাত্রার কবলে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, এই প্রথম যুক্তরাজ্যে পারদ চড়ল ৪০ ডিগ্রির উপরে। ১৮৮৭’র পর এই প্রথম আয়ারল্যান্ডে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা লক্ষ্য করা যায়। এমনকি সবচেয়ে শীতলতম দেশ সুইডেনে গত বছর ৩৭ ডিগ্রির উপর তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করে। উল্লিখিত সংস্থা জানিয়েছে, ২০২২’এ বিশ্বের তাপমাত্রার গড় হার প্রাক শিল্প যুগের তুলনায় ১.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হয়েছে।

রিপোর্ট আরও জানিয়েছে, গোটা দুনিয়া জুড়ে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ৯ কোটি ৫ লক্ষ মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছেন। রিপোর্ট জানিয়েছে, “বেশির ভাগ মানুষ এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়ে নিজেদের আগের বাসস্থান ত্যাগ করে সেই দেশেরই অন্যত্র আশ্রয় খুঁজেছে, আবার বেশ কিছু মানুষ আন্তর্জাতিক সীমানা পার হয়ে নিরাপদ জায়গায় পাড়ি দিয়েছে।”

ভারতেও এমনকি ফেব্রুয়ারি মাসে তাপপ্রবাহ লক্ষ্য করা যায় কয়েকটি রাজ্যে। এবার মেঘালয়, ত্রিপুরায় বিভিন্ন জায়গায় তাপপ্রবাহের কারণে স্কুল বন্ধ রাখতে হয়েছে। ন’টি রাজ্যে উচ্চ তাপমাত্রা সহ তাপপ্রবাহের আশঙ্কা আছে বলে সতর্ক করেছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর। দ্য ল্যান্সেট পত্রিকার একটা রিপোর্ট জানাচ্ছে, গত ১৭ বছরে ভারতে গরমের কারণে মৃত্যু বেড়েছে ৫৫ শতাংশ! আমাদের দেশে শ্রমিকদের ৬৬ শতাংশ প্রবল দাবদহের মধ্যেও খোলা জায়গায় কাজ করতে বাধ্য হন। ফলে শারীরিক অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুর সংখ্যাও ঊর্ধমুখী। আরেকটি রিপোর্ট বলছে, শুধুমাত্র তাপপ্রবাহের কারণে ভারতে আভ্যন্তরীণ উৎপাদন কমেছে ৫.৪ শতাংশ — জি’২০ দেশগুলোর মধ্যে যা সর্বোচ্চ। গত বছরের তুলনায় এ বারের তাপপ্রবাহ তীব্রতর। ফলে, কৃষির সংকট গত বারের চেয়েও এবার ভয়াবহ হতে চলেছে। শুধু ভারতেই নয়, গোটা দুনিয়াতেই বিশ্ব উষ্ণায়নের ধ্বংসাত্মক কুপ্রভাব পড়েছে কৃষির উপর। রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসাব হল, ২০২১ সালে গোটা দুনিয়ায় প্রায় ২৩০ কোটি মানুষ খাদ্য অনিশ্চয়তার কবলে আর তাঁদের মধ্যে ৯২ কোটিরও বেশি মানুষ তীব্র খাদ্য অনিশ্চয়তার শিকার।

জলবায়ুর যে বদল, যে প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা বিরাট বিপদের ইঙ্গিতবাহী। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় এই বিপদকে মোকাবিলা করতে রাষ্ট্র, সরকার, সাধারণ নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে।

- অতনু চক্রবর্তী

dilip-banerjee-memorial-lecture

গত ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ডঃ দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা আয়োজিত হয় শিয়ালদহের জর্জ স্মৃতি ভবনে। আয়োজক ছিলেন ‘ডঃ দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় স্মারক কমিটি’ এবং ‘দিগন্তবলয়’ পত্রিকা। এই অনুষ্ঠানে ‘নারীশিক্ষা : বিদ্যাসাগর থেকে রোকেয়া’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন বিদ্যাসাগর বিশেষজ্ঞ বিশিষ্ট চিন্তক ও গবেষক প্রাণতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়।

সভার শুরুতে বরুণ দাস তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠের মধ্য দিয়ে দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতির উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানান। শিক্ষাবিদ প্রাবন্ধিক ডঃ নিত্যানন্দ ঘোষ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা সূত্রে বিরল গুণের অধিকারী বর্ণময় চরিত্রের বামপন্থী বুদ্ধিজীবী মানুষটির জীবনের নানাদিক তুলে ধরেন। তাঁর আন্তরিক উচ্চারণে বিজ্ঞানের মেধাবী গবেষক কীভাবে নকশালবাড়ির ডাকে বিপ্লবের পথে পা বাড়িয়েছিলেন, রাষ্ট্রের ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং আমৃত্যু সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের সঙ্গে যুক্ত থেকে পার্টির দেওয়া বিভিন্ন দায়িত্ব সামলেছেন – তা যেমন উঠে এসেছে, তেমনই এক জৈব রসায়নবিদ হিসাবে তাঁর অভিজাত পেশাজীবন ও এক বিস্তৃত পরিসরে উদার, দরদী সামাজিক জীবনও উঠে এসেছে। সদাহাস্যময় সদালাপী আত্মপ্রচারবিমুখ মানুষটি আদর্শের প্রশ্নে কখনও মাথা নোয়াননি। পার্টির মধ্যেও মতাদর্শগত বিতর্ক চালাতে কখনও পিছপা হননি। তাঁর সৃষ্টিশীল মনন ব্যাপ্ত হয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গ গণসংস্কৃতি পরিষদ পরিচালনায়, ‘নবান্ন’ সম্পাদনায়, 'চিত্রচেতনা'র ব্যনারে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও তার বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণে এবং সর্বোপরি তাঁর রাজনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ে অজস্র লেখাপত্রে। আদ্যন্ত রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন উদারচেতা, মুক্তমনা বিরাট মাপের এক মানুষ। ২০০৯ সালে তাঁর অকাল প্রয়াণের ক্ষতি কোনদিন পূর্ণ হওয়ার নয়।

নারীশিক্ষা প্রসারে বিদ্যাসাগরের অনন্য ভূমিকা নিয়ে দীর্ঘ যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য রাখেন প্রাণতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঠেঘাটে গ্রামেগঞ্জে বিদ্যাসাগর নিয়ে প্রচার চালানো মানুষটি বিদ্যাসাগর সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরেন যা এই মনীষীকে নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা ভেঙে দেবে। বিদ্যাসাগরের ডায়েরিগুলি প্রকাশের দাবিও জোরালো হয়ে ওঠে এই সভায়।

মহিয়সী নারী রোকেয়া সাখাওয়াতের নারীশিক্ষার প্রসারে অসাধারণ অবদান নিয়েও তিনি আলোচনা করেন। অকালবৈধব্য সত্ত্বেও রোকেয়া অন্তঃপুরের অন্তরাল সরিয়ে, অসম সাহসে এই মহান কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, গড়ে তুলেছিলেন দু দু'টি মহিলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নিজের সমাজের রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য মেয়েদের লাঙল ধরার প্রেরণাও যুগিয়েছেন – যা সত্যিই অভূতপূর্ব।

তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করেও এ দিনের অনুষ্ঠানে মানুষের উপস্থিতি বুঝিয়ে দিয়েছে, দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের কত ভালোবাসার, শ্রদ্ধার মানুষ ছিলেন, থাকবেন।

harry belafonteharry-belafonte

সেটা ১৯৫৬ সাল। ক্যালিপসো নামের একটা গানের অ্যালবাম বেরোল মার্কিন দুনিয়ায়। এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের গাওয়া কয়েকটা লোকগানের সংকলন। সেখানে একটা গান ছিল যার নাম জামাইকা ফেয়ারওয়েল আর একটা ছিল ডে ও বা ব্যানানা বোট সঙ। প্রকাশের পর পরই উঠল বিপুল আলোড়ন। মার্কিন দুনিয়া থেকে গোটা বিশ্ব মেতে উঠল সেই গানের সুরে কথায় গায়কীতে। গানের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা এক শিল্পীর আসন পাকা হয়ে গেল চিরদিনের মতো। সেই মানুষটি, বিশ্বের অগণিত শ্রোতার প্রাণের শিল্পী হ্যারি বেলাফন্টে চলে গেলেন ২৫ এপ্রিল, ৯৬ বছর বয়েসে। তারপর থেকেই কলকাতা থেকে ক্যালিফোর্নিয়া, মস্কো থেকে মেলবোর্ন – গোটা বিশ্বেই তাঁকে নিয়ে স্মরণ, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার বান ডেকেছে বিভিন্ন সমাজ মাধ্যমে।

হ্যারি বেলাফন্টে নিঃসন্দেহে লোকগানের এক কিংবদন্তী শিল্পী। কিন্তু মনভোলানো গান গাওয়ার মধ্যেই কেবল তিনি নিজেকে তিনি সীমাবদ্ধ রাখতে চান নি। কালো মানুষদের অধিকার আন্দোলন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নাগরিক আন্দোলনের সামনের সারির এক মানুষ ছিলেন তিনি। এই সব আন্দোলনের সূত্রেই বর্ণভেদ বিরোধী লড়াইয়ের মহানায়ক মার্টিন লুথার কিং (জুনিয়ার) এর বন্ধু ও সহযোদ্ধা হিসেবে তাঁর আর এক অন্য পরিচিতি রয়েছে। তুমুল জনপ্রিয় এই লোকগায়ককে মার্কিন রাষ্ট্র তাই নজরদারির আঁতশকাঁচের তলায় রেখেছিল বরাবর। সেটা অবশ্য হ্যারি বেলাফন্টের প্রতিবাদী সত্তাকে ভয় দেখিয়ে সীমিত করতে পারেনি। পল রোবসন, পিট সিগার, বব ডিলান, জোন বয়েজদের মতোন তিনিও গান আর প্রতিবাদকে বরাবর মিশিয়েছিলেন।

১৯২৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম হলেও বেলাফন্টে ছেলেবেলাতেই চলে গিয়েছিলেন তাঁর পিতৃপুরুষের দেশ জামাইকায়। ১৯৩২ থেকে ১৯৪০ সাল অবধি সেখানেই ছিলেন তিনি। তারপর আবার মার্কিন দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু জামাইকার সুর, জীবনছন্দ আর অভিজ্ঞতা তাঁকে যেমন গড়েছিল তেমনি সারাজীবনের সৃষ্টির প্রেরণা হয়ে থেকেছিল। হ্যারি বেলাফন্টে অভিনয়ও করেছেন। নানা সিনেমায় অভিনয়ের সূত্র ধরে তাঁর শিল্পীসত্তার অন্য এক মাত্রাও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। তবে লোকগানের শিল্পী হিসেবেই তিনি অমর হয়ে থাকবেন।

বেলাফন্টের গানে প্রেম আর প্রতিবাদ হাত ধরাধরি করে থাকে। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত গান দুটির কথাই মনে করা যাক। জামাইকা ফেয়ারওয়েল যদি সে দেশে রেখে আসা এক মিষ্টি মেয়ের স্মৃতি ভালোবাসায় নিবেদিত হয় তাহলে আর এক বিখ্যাত গান ব্যানানা বোট সঙ ধরতে চেয়েছে কলা শ্রমিকদের কষ্টকর জীবন আর লড়াইকে। লাতিন আমেরিকা জুড়ে তখন বহুজাতিক দৈত্যকায় কৃষি ব্যবসায়ীদের রাজত্ব চলছে। ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানি শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রই নয়, বকলমে নানা দেশের রাজনীতিকেও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। একের পর এক দেশে স্বৈরশাসকদের তারা ক্ষমতায় বসাচ্ছে, নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর বিরুদ্ধে মিলিটারি ক্যু-এর চক্রান্ত করছে। লাতিন আমেরিকা থেকে প্রথম কথাসাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাবেন যিনি, সেই আস্তুরিয়াস তাই লিখবেন ব্যানানা ট্রিলজি নামে পরিচিত তিন পর্বের উপন্যাস আর লাতিন আমেরিকার কলা কোম্পানিগুলির নিয়ন্ত্রণে থাকা শাসন প্রণালীর দৌলতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিভাষায় ঢুকে পড়বে ব্যানানা রিপাবলিক নামটি। এই প্রেক্ষাপটেই আমাদের দেখতে হয় কলা শ্রমিকদের নিয়ে লেখা ব্যানানা বোট সঙের মতো গানকে। দীর্ঘ সময় ধরে কলা শ্রমিকেরা কাজ করেছে কলা বাগানে। ছ ফুট, সাত ফুট, আট ফুটের বিশাল বিশাল কলার কাঁদি কেটেছে তারা। সেখানে লুকিয়ে থাকা ভয়ংকর বিষাক্ত মাকড়সা টারান্টুলার হাত থেকে রক্ষা পাবার চেষ্টা চালাতে হয়েছে। এখন তারা ক্লান্ত। যে কোম্পানীর শ্রমিক তারা, তার গুণতিকারী কর্মীকে কাজের হিসাব বুঝিয়ে দিয়ে তবেই তারা ঘরে ফিরতে পারবে। তাই তাকে বারবার ডাকছে তারা। এই গানে কথার পাশাপাশি সুরের মধ্যেও বেলাফন্টে নিয়ে আসতে পারেন শ্রমের আবহকে। অন্যদিকে জামাইকায় ফেলে আসা মেয়েটির স্মৃতি নিয়ে লেখা বিখ্যাত গানটির সুরে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের আবহাওয়া আর প্রকৃতি নিবিড়ভাবে জড়িয়ে যায় আর এইভাবেই এই গানগুলি হয়ে ওঠে প্রকৃত লোকগান।

সৌভিক ঘোষাল

ramchand murmusadhu-ramchand-murmu

সাঁওতাল সমাজে সাধু রামচাঁদ মুরমুর পরিচিতি “কবিগুরু” বা “মহাকবি” হিসেবে। অনাড়ম্বর নিরহঙ্কার ত্যাগির মতো জীবন যাপনের জন্য সাধারণ মানুষের কাছে ‘সাধু’ হিসেবে পরিচিত হন রামচাঁদ। জন্ম অধুনা ঝাড়গ্রাম জেলার শিলদার নিকটবর্তী কামারবাঁদি গ্রামে বাংলা ১৩০৪ সালের বৈশাখ মাসের ১৬ তারিখ (ইংরেজি তারিখে ১ মে ১৮৯৭)। পিতা মোহন মুরমু ও মাতা কুনি মুরমু। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট রামচাঁদ গ্রামের স্কুল ও মধ্য ইংরাজী স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। অভাবের তাড়নায় উচ্চ শিক্ষার কোন সুযোগ না পেলেও তিনি স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠেন। সুর তাল ছন্দের নিখুঁত বুননে তিনি ফুটিয়ে তুলতে থাকেন সাঁওতাল সমাজের লায় লাকচার এবং সমাজের যত ভাল আর মন্দ। সাধু রামচাঁদ মুরমু কৈশোর ছাড়িয়ে যৌবনে পা দিয়েই দেখলেন যে সাঁওতালরা বৃহত্তর সমাজে আদিবাসী হিসেবে ঘৃণিত ও অবহেলিত। আর এই অবহেলা অবজ্ঞার ফলে সাঁওতালরা নিজেরাই নিজের ভাষাকে যথেষ্ঠ অবহেলা করে। এমনকি পথে ঘাটে দুই জন সাঁওতাল নিজ ভাষায় কথা বলতে সংকোচ বোধ করে। রামচাঁদ চাইলেন সাঁওতালদের মধ্যে স্বাভিমান ও মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি করতে। আবার সমস্ত আদিবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি অখন্ড পরিমন্ডল তৈরিতে মনোনিবেশ করলেন।

সাঁওতালি ভাষায় বই ছাপানো তখনকার দিনে একটি অকল্পনীয় ব্যাপার ছিল। তাই তিনি গান রচনা করে সেই গানে নিজে সুর দিলেন। তাঁর সৃষ্ট জনপ্রিয় গান “দেবোন তিগোন আদিবাসী বীর” - আজ ছোটনাগপুরী ও ঝাড়খণ্ডী আদিবাসীদের জাতীয় সঙ্গীত হয়ে উঠেছে। কবি সারদা প্রসাদ কিস্কু তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, সাধু রামচাঁদের গানের ঢেউ পুরুলিয়ার পাহাড়ি বনে আছড়ে পড়লে কৈশোরে তিনিও তার দোলায় তরঙ্গায়িত হন। “রামচাঁদ মুরমু আঃ দেবোন তেঁগোন আদিবাসী বীর, অনা তেড়ং হড়কো দুসৗউবোনা সেরেঞ দ নডেন হড়াঃ লুতুররে তারকোগৎ আকানা। সাঁও সাঁওতে উনিয়াঃ সারি ধরম সেরেঞ্ পুঁথিহঁ সেটের এনা।” (সাহিত্য আন্দোড়রে পুরুলিয়ৗ জিলৗ রেন হড় হপন)। রামচাঁদ সারি ধরম পুঁথি রচনা করে ও গ্রামে গ্রামে প্রচার করে আদিবাসী সাঁওতালদের নিজেদের প্রকৃত ধর্মের বিষয়ে সচেতন। তাঁর সাধারণ জীবন যাপন ও সারি ধরম নিয়ে প্রচারের কারণে সাধু নামে অভিহিত হন। তাঁর বহু শিষ্যও জুটে যায়। ১৯২৫-৩০’এর মধ্যে সাঁওতালি ভাষার উপযোগী “মঁজ দাঁদের আঁক” নামে এক বর্ণমালাও তৈরি করলেন। পরবর্তী কালে সেই বর্নমালতেই তাঁর সাহিত্য সম্ভার রচনা করেন। কিন্তু অর্থাভাবে তাঁর এই লিপির ব্লক তৈরী করে প্রচার করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। সাহিত্যের প্রায় সমস্ত শাখাতেই তাঁর অবাধ যাতায়াত ছিল। তাঁর রচিত ‘সংসার ফেঁদ’ খুব উঁচু মানের নাটক। ‘লিটা গডেত’, ‘সারি ধরম সেরেঞ্ পুঁথি’ ‘ইসরড়’ প্রভৃতি রচনা বাঙলা লিপিতেই ছাপা। এখনও তাঁর রচনার বিশাল অংশ অপ্রকাশিত। উনিশ শতকের প্রথম প্রহরে যখন সাঁওতালি ভাষায় লিখিত সাহিত্য ছিল না বললেই হয় তখন সাধু রামচাঁদ নতুন নতুন কবিতা ও গান লিখে ক্ষয়িষ্ণু সাঁওতাল সমাজকে সচেতন করতে চেয়েছিলেন। নিজেকে কবি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করবার লক্ষ্য সাধু রামচাঁদের ছিল না, বরং সাঁওতালি ভাষাকে প্রতিষ্ঠাপূর্বক সাঁওতাল জাতিকে সংঘবদ্ধ করার সংকল্পই ছিল তাঁর অন্যতম লক্ষ্য। সাধু রামচাঁদের এই ঐতিহাসিক গুরুত্ব আজকের দিনের সাঁওতাল কবি ও সাহিত্যিকরা উপলব্ধি করেন। সাধু রামচাঁদকে নিয়ে কবিতা ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন আধুনিক সাহিত্যিকরা। তবে বস্তুবাদী সাহিত্যিক ও পোন্ডগোডা পত্রিকার সম্পাদক শ্রীযুক্ত গোমস্তা প্রসাদ সরেনের (গত ৭ এপ্রিল ২০২৩ গোমস্তা প্রসাদ সরেন প্রয়াত হয়েছেন, ২০ এপ্রিল সংখ্যার দেশব্রতীতে তাঁর স্মরণে পাপিয়া মাণ্ডির লেখা ও কবিতা প্রকাশিত হয়েছে) লেখা সাধু রামচাঁদ বিষয়ক কবিতাটিতে যর্থাথ মূল্যায়ন দেখা যায়। প্রথম কারাম পূজার প্রবর্তক ধার্মুর সঙ্গে তিনি সাধু রামচাঁদের তুলনা করেছেন। সাধু রামচাঁদ মুরমুও ধার্মুর মতো সকলের বিদ্রুপ সহ্য করেছিলেন।

সাধু রামচাঁদের পূর্ণ বিকাশ ঘটে ১৯৩৫-৩৬ এর কাছাকাছি। এক কথায় ১৯৩০-৩৯ সাল ছিল সাঁওতাল সমাজের ত্রিবেণী সঙ্গমের যুগ। ভারতের স্বাধীনতার আন্দোলন ও স্বজাতি প্রীতির প্রবল আকর্ষণ, আদর্শবোধ, আদিবাসী মহাসভার দ্বারা আদিবাসীদের প্রতিষ্ঠা করার আগ্রহ আবার সাধু রামচাঁদ, পাউল জুঝৗর সরেন, পন্ডিত রঘুনাথ মুরমু, মঙ্গল সরেন প্রভৃতির সাহিত্যসৃষ্টির ভূমিকা একত্রিত হয়ে এক ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি করে। সাধু রামচাঁদ বুঝতে পেরেছিলেন, ভাষা ও সাহিত্য ছাড়া কোনো জাতির বিকাশ অসম্ভব। সাহিত্যের বিকাশে জাতির বিকাশ। তাই বাড়িঘর আত্মীয় পরিজন ছেড়ে আমরণ সাহিত্য সাধনায় নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছিলেন। সাঁওতালি সাহিত্যের ধারাবাহিকতাকে বুঝতে সাধু রামচাঁদের রচনার মূল্যায়ন প্রয়োজন। ধর্ম ভাবনার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন ‘সারি ধরম’-এর প্রবক্তা। জীবিতকালে তিনি তাঁর সাহিত্যকীর্তিকে আর্থিক অনটনের জন্য মুদ্রিত আকারে প্রকাশ করে যেতে পারেননি। তাই দীর্ঘদিন তাঁর পাণ্ডুলিপি অরক্ষিত অবস্থায় ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁরই নামাঙ্কিত সাধুরামচাঁদ উইহার বাথান (সাধুরামচাঁদ মুরমু স্মৃতি কমিটি) ও মারাংবুরু প্রেসের কর্ণধার ড. সুহৃদকুমার ভৌমিকের যৌথ প্রচেষ্টায় তাঁর পাণ্ডুলিপিগুলি সংগ্রহ করে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করা হয়। গ্রন্থগুলি হল - (১) সারি ধরম সেরেঞ পুঁথি (২) অল দহ অনড়হে (৩) লিটা গোডেৎ (৪) সংসার ফেঁদ (৫) ঈশরড়।

কামার বান্দি সাধুরাম চাঁদ মুরমু উইহার বাথান থেকে তাঁর অনেক গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়। সেগুলোই পরবর্তী কালে পশ্চিমবঙ্গ সরকাররের পক্ষ থেকে ‘সাধুরাম চাঁদ মুরমু অনল মালা’ নামে সংকলন আকারে প্রকাশিত হয়। তাঁর অগণিত পান্ডুলিপি অনেকে প্রকাশের জন্য কবির কাছ থেকে নিয়ে গেছেন। তারপর সেগুলোর আর হুদিস পাওয়া যায় নি। সাধু রামচাঁদ মুরমু শুধু কবি ছিলেন না। সাধুও না। তিনি ছিলেন দার্শনিক। তিনি ছিলেন গবেষক। তাঁর অনেক সৃষ্টি বাংলায় অনুবাদ হয়েছে। কবি, সাধু, দার্শনিক, শিল্পী, প্রকৃতি প্রেমিক, সমাজ সেবক, সংস্কারক ও গবেষক সাধু রামচাঁদ মুরমু বাংলা ১৩৬০ বঙ্গাব্দের ১৯ অগ্রহায়ন (ইংরাজি ১৯৫৪) দেহত্যাগ করেন। 

warish-khan-passed-away

পশ্চিম মেদিনিপুর জেলা কমিটির সদস‍্য কমরেড ওয়ারিশ খান আজ ভোর ৫টায় প্রয়াত হয়েছেন। মেদিনিপুর শহরের কমরেড। বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৮ বছর। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতা মেডিকেল কলেজে গল ব্লাডার অপারেশন হয়েছিল। এরপর বাড়িতে ছিলেন। তিন দিন আগে শহরের ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে একটা টনিক জাতীয় ওষুধ খাওয়ার পর বমি হয় এবং শারিরীক সমস‍্যা বোধ করায় হাসপাতালে ভর্তি হন। আজ ভোরে মৃত‍্যু হল। জেলা পার্টি অত‍্যন্ত শোকাহত। পার্টির কাছে এ এক অপূরণীয় ক্ষতি। বামপন্থী পরিবারের মানুষ। সিপিআই(এম) ছেড়ে সিপিআই(এমএল) দলে এসেছিলেন এবং বেশ কিছুদিন সর্বক্ষণের কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। গত জেলা সম্মেলনে জেলা কমিটির সদস‍্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে কাজ করছিলেন। কমরেড ওয়ারিশের স্ত্রী ও পরিবারের পাশে পার্টি থাকবে। কমরেড ওয়ারিশ খান লাল সেলাম।

comrade-aziz-passed-away

অশোক নগর লোকাল কমিটির অন্তর্গত হিজিলিয়া শাখার সদস্য কমরেড আজিজ মন্ডল (৬২) অসুস্থ হয়ে প্রয়াত হলেন। পেশায় নির্মাণ কর্মী তিনি একজন সক্রিয় পার্টি কর্মী ছিলেন। লোকাল কমিটির পক্ষ থেকে তাঁর শেষকৃত্যে শ্রদ্ধা জানানো হয়।  
কমরেড আজিজ লাল সেলাম।

=== 000 ===

খণ্ড-30
সংখ্যা-12